চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে অমিত মুহুরী হত্যার আসামি রিপন নাথকে কেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে একই সেলে স্থানান্তর করা হয়েছিল, সে প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্ত শুরু করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আসামি রিপন নাথকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার আদালতে শুনানি হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আজিজ আহমেদকে। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিদর্শক আজিজ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে ইটের টুকরো দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করা হয় এক সময়ের যুবলীগ কর্মী অমিত মুহুরীকে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রিপন নাথ নামের ২৮ বছর বয়সী যে হাজতিকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে, তাকে বুধবার বিকালে ওই কক্ষে নেওয়া হয়। একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত এপ্রিল থেকে তিনি কারাগারে আছেন। বিকালে এসে রাতেই অপর একজন বন্দিকে কেন তিনি মাথায় আঘাত করলেন, কারা কক্ষে তিনি কীভাবে ইটের টুকরো হাতে পেলেন- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
উপ-কমিশনার মিজানুর বলেন, ‘আমরা ওই কক্ষ পরিদর্শন করেছি। সেখানে সবার সাথে কথা বলেছি এবং রিপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করেছি। সে ইট দিয়ে অমিতের মাথায় আঘাত করার বিষয়টি স্বীকার করলেও কেন আঘাত করেছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, রিপন নাথ কেন অমিতের মাথায় আঘাত করেছে সেটা বের করা আমাদের প্রধান কাজ। এজন্য আমরা কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে কাজ শুরু করেছি। এর অন্যতম হল- রিপনকে কেন অমিত মুহুরীর সঙ্গে একই কারাকক্ষে স্থানান্তর করা হয়েছে সেটা।’
‘আমরা জানতে পেরেছি রিপন ছিল ৩২ নম্বর সেলের ১-২ নম্বর রুমে। বুধবার বিকালে তাকে ছয় নম্বর রুমে স্থানান্তর করা হয়। আর অমিতের রুমের একজনকে নেওয়া হয়েছে রিপনের রুমে।’
তদন্ত কর্মকর্তা আজিজ বলেন, ‘রিপন কেন অমিতকে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় আঘাত করেছেন- তা জানতে পারলে স্পষ্ট হবে হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিত ছিল কিনা। ভাঙা ইটের টুকরো কীভাবে কারা কক্ষে গেল সেটাও বের হয়ে আসবে।’
সীতাকুন্ড উপজেলার মৃত নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে রিপন একসময় পাহাড়তলীর সাগরিকা এলাকার অর্গানিক জিন্স নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। অশোভন আচরণের জন্য তাকে ওই কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয়। পরে ছুরি হাতে ওই কারখানায় ঢুকে বেশ কিছু কর্মীকে জিম্মি করার অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল রিপনকে গ্রেফতার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। ১০ এপ্রিল থেকে কারাগারে আছে রিপন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে রিপন নাথ নামে এক হাজতির সঙ্গে অমিতের মারামারি হয়। কারারক্ষীরা অমিতকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। ওই কক্ষের আরেক হাজতি বেলাল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মশহুদুল কবীরকে বলেছেন, হঠাৎ তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান রিপন ইট দিয়ে অমিতকে মারছেন। তবে অমিতের সঙ্গে রিপনের কোনো বিষয়ে তর্কাতর্কি বা মারামারি হয়েছিল- এমন কথা বেলাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেননি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত অমিতের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে রেলের দরপত্র নিয়ে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৩টি মামলা আছে। হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আগেও তিনি একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। সর্বশেষ নিজের বন্ধু ইমরানুল করিম ইমনকে হত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রেফতার করে অমিতকে। তারপর থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।
ওই বছর ৯ অগাস্ট নন্দনকানের হরিশ দত্ত লেইনে অমিতের বাসায় ইমনকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢালাই করে ফেলে দেওয়া হয় এনায়েত বাজারের রানীর দিঘীতে। এক মাসের মাথায় কুমিল্লার একটি মাদক নিয়াময় কেন্দ্র থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অমিত বলেছিলেন, তার স্ত্রীকে ‘প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন’ ইমন। এ কারণেই তাকে হত্যা তিনি করেন।
কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি: কারা অভ্যন্তরে হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভ্যন্তরীণ একটি তদন্ত কমিটি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন জানান, তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে আছেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন। ডিআইজি প্রিজনস, চট্টগ্রাম ফজলুল হক ও নোয়াখালীর জেল সুপার মনির হোসেন এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ওই দিন দায়িত্বে থাকা পাঁচ কাররক্ষীকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেও জেল সুপার জানিয়েছেন।
Discussion about this post