আইনজীবীগণের নেতৃত্ব নির্ধারণী এই নির্বাচনে একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং বিবেকবান ও সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রার্থী যাচাই-বাচাই করে ভোট দেওয়া উচিত। প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, বিশ্বস্থতা, দেখে ভোট দেওয়া কর্তব্য। কারো ভোট এতো মূল্যহীন নয় যে, যাকে তাকে দেয়া যাবে বরং আপনার ভোটের মূল্য ও গুরুত্ব অনেক। তাইতো নির্বাচনের সময় ভোটারদের কদর বেড়ে যায়। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে। যখন ভালো-মন্দ, যোগ্য-অযোগ্য উভয় প্রতিদ্বন্দ্বি সমান ভোট পায় তখন একটি ভোট পুরো নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। সুতরাং একজন ভোটার বা একটি ভোট নির্বাচনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই আইনজীবীদের প্রতিনিধি নির্ধারণীর এই নির্বাচনে কিছু বিষয় মাথায় রেখে সকল বিজ্ঞ আইনজীবীর ভোট দেয়া উচিতঃ
প্রথমত, তাকে অবশ্যই একজন নিয়মিত আইনজীবী হতে হবে। তার বিচরণ হতে হবে আদালত প্রাঙ্গণ ভিত্তিক। আদালত প্রাঙ্গণ ভিত্তিক না হয়ে শুধু চেম্বার ভিত্তিক হলে তিনি আদালত পাড়ার নানা সমস্যা সম্পর্কে অবগত থাকবেন না। যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে জিতে তার সমস্য গুলো বুঝে উঠতেই দেখা যাবে যে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, তাকে অবশ্যই একজন খুবই প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিজ্ঞ আইনজীবী হতে হবে। তাকে হতে হবে আইনজীবীদের আইনজীবী, কারণ আইনজীবীদের আইনজীবীই হবেন আইনজীবীদের নেতা, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আপনার নেতা অর্থাৎ একজন আইনজীবী প্রতিনিধি, যিনি আপনাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি যদি অগাধ প্রজ্ঞাসম্পন্ন না হন, তাহলে সমাজের মানুষজন আপনার প্রজ্ঞা নিয়েও কথা বলবেন।
তৃতীয়ত, প্রত্যেক বিজ্ঞ আইনজীবী ভোটারের লক্ষ্য থাকা উচিত এটাই যে, তাকেই ভোট দেব, যিনি বারের উন্নয়ন করবেন, যিনি বারের বিদ্যমান সম্পদকে যথাযথভাবে উপভোগ ও ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে দিতে পারবেন। যেমনঃ বারের লাইব্রেরীর উন্নয়ন, পেশাগত উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, আইনপেশা পরিচালনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশের আনয়ন, আইনজীবীদের বিভিন্ন সমস্যা মিলিতভাবে সমাধানের জন্য যথাযথ পলিসি প্রণয়ন, বারের ক্যান্টিনের উন্নয়ন ইত্যাদি।
চতুর্থত, এমন কাউকেই আইনজীবীদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করা উচিত যার সাথে সরকারের যথেষ্ট লিয়াজো রয়েছে, কারণ বারের উন্নয়ন তথা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড কখনই আনয়ন সম্ভব নয় যদি না সরকারের সাহায্য আনা সম্ভব না হয়। যেমন, কম বেশি সকল বারেই একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে আইনজীবীদের বসার স্থানের সমস্যা এবং এ ধরনের সমস্যার একমাত্র সমাধানই হচ্ছে নতুন কোন ভবন স্থাপনের উদ্যোগ, আর নতুন কোন ভবন স্থাপনা সরকারের সাহায্য ছাড়া বারের একার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।
পঞ্চমত, তরুণ আইনজীবীদের পেশাগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে এমন কাউকেই ভোট দেয়া উচিত। তরুণ আইনজীবীরা আদালত পাড়ায় নানান দুঃখ দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে। অথচ এই সমস্যা নিয়ে কখনই কেউ কাজ করে না বা কোন অজানা কারণে করতেও চায় না। তবে এই নির্বাচনের সময় তরুণ আইনজীবীদের এই সমস্যা কারা দূরীভুত করতে পারবেন, সেই দিক বিবেচনা করে ভোট দেয়া উচিত।
ষষ্ঠত, একজন সফল নেতার দায়িত্ব হচ্ছে তার অনুসারীদেরকে শুধু অনুপ্রেরিত ও পরিচালিত বা তাদের দিয়ে কাজ করানোই নয় বরং তার অনুসারীদের মাঝ থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতা অর্জনের প্রতিভার অন্বেষণ ও প্রশিক্ষণ। যারা নতুন নেতৃত্বে বিশ্বাসী নয়, কিংবা যারা নতুন নেতৃত্বে বাধা প্রদান করে এবং যারা নতুনদের সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষীগত করার চেষ্টায় মত্ত, তাদেরকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
সপ্তমত, তাকেই নির্বাচনে জয়লাভ করানো উচিত যার পক্ষে এই আইন পেশার এবং পেশাগত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে এবং যাদের দ্বারা সম্ভব আইনজীবীদের পেশাগত উন্নয়নকল্পে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ট্রেনিং আয়োজন করা যেখানে দিক নির্দেশনা দিবেন কোন প্রথিতযশা কোন বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী।
আইনজীবীগণকে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়ে থাকে, আর এই সমাজের প্রকৌশলীগণ আইন চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ না পান তাহলে সমাজে তার জায়গা থেকে যতটুকু ভূমিকা পালন করার কথা তা পারবেন না। আর পরিবেশ সৃষ্টি করিয়ে দেয়ার যারা কারিগর তারা হচ্ছেন এই এই আইনজীবী নেতৃবৃন্দ, তাই যোগ্য নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন মানুষগুলোই যাতে নেতৃত্বে যান সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।




Discussion about this post