
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে, (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ যদিও এ অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ অর্থাত্ নির্বাচনকালীন সময়েও সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা অব্যাহত থাকবে। তবে ১২৩ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা হলে নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন বসতে পারবে কি পারবে না—এ বিষয়ে সংবিধানে কোনো ব্যাখ্যা নেই। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে তাও বলা হয়নি।
বিশিষ্ট আইনবিদ বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেছেন, সংবিধানে বিষয়গুলো পরিষ্কার উল্লেখ না থাকায় নানারকম জটিলতা তৈরি হবে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হবে। তার মতে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে সংসদ না ভেঙে দিলে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করতে হবে। কারণ শেষ ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে ১২৩(৩) (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে গেলেও নানা জটিলতা তৈরি হবে সংবিধানের নানা অস্পষ্টতার কারণে। তাই নির্বাচনকালীন ৯০ দিনে সংসদ বসতে পারবে না এমন বিধান রাখা, এ সময়ে সংসদের ও সংসদ সদস্যদের কাজ ও ক্ষমতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে, প্রধান কে হবেন তা ঠিক করে নতুন আইন প্রণয়ন করা উচিত। তিনি বলেন, সরকারের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে, একটি সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চাইলে নতুন আইন প্রণয়ন করে নির্বাচনকালীন করণীয়গুলো পরিষ্কার করা। অন্যটি ১২৩ (৩) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে অন্যান্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করতে পারে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছোট মন্ত্রিপরিষদ। তবে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে অর্থাত্ ২৭ অক্টোবরের আগেই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ২৭ অক্টোরের পর সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে।
বিশিষ্ট আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, যদি ১২৩(৩)-এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনকে নতুন আচরণবিধি তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা হবে প্রার্থীদের মধ্যে। তাই ১২৩(৩)-এর (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারের উচিত হবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করা। তাহলে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে অভিযোগ উঠেছে তা থাকবে না। তার মতে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগে মৌলিক বিষয়ে সমঝোতা না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট এবং নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাবে বিস্তারিত কিছু নেই মন্তব্য করে শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বললে ভালো হতো। বিরোধী দল থেকে কতজন মন্ত্রী নেওয়া হবে বা কোন দফতর দেওয়া হবে—এগুলো স্পষ্ট না করলে জটিলতার সমাধান হবে না।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য যে সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার কো-চেয়ারম্যান ও দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সর্বদলীয় মন্ত্রিপরিষদ গঠনের প্রস্তাবের পর বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথ অনেকটাই সহজ হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল তা দূর হয়েছে। তাই নতুন করে সংবিধান সংশোধন বা আইন প্রণয়নের কোনো প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Discussion about this post