জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাচ্ছেন মামলা দু’টির প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (০২ জুন) সকাল দশটার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হয়েছেন তিনি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।
খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়া উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতপাড়া ও আশাপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, ৠাব ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সরজেমিনে দেখা গেছে, বকশি বাজারের মোড়, বদরুন্নেছা কলেজের সামনে, আলিয়া মাদ্রাসার সামনে, কারা সদর দফতর ও আদালতের প্রবেশের প্রথম ফটকসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ও ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। স্তরে স্তরে আর্চওয়ে স্থাপন করে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
এসব এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসা ও বকশিবাজার মোড়ে এপিসিসহ পুলিশের সাজোয়া যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৩৪২ ধারায় খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের কথা রয়েছে। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের জেরার দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে চ্যারিটেবল মামলায় গত ১৯ মে খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন পঞ্চম দফায় পিছিয়ে ০২ জুন ধার্য করে তিনি হাজির না হলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলে জানিয়েছিলেন আদালত। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান গত ০৭ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদসহ ৩২ জন সাক্ষী।
অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদসহ ৩ জন সাক্ষী। তাদের মধ্যে দুই সাক্ষী মামলাটির রেকর্ডিং অফিসার এসএম গাফফারুল ইসলাম ও সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার শফিউদ্দিন মিয়াকে আসামিপক্ষের জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ-জেরার দিন ধার্য রয়েছে বৃহস্পতিবার।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জামিনে থাকা জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আদালতে উপস্থিত আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন। তারা আদালতে হাজির হয়েছেন এবং তারেক রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আইনজীবীর হাজিরা দাখিল করেছেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।
খালেদার পক্ষে আদালতে থাকছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। দুদকের পক্ষে শুনানি করবেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।



Discussion about this post