ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। দলমত-নির্বিশেষে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন অনেকেই। বাদ জাননি ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীরাও। আওয়ামী লীগের ৬ মন্ত্রীও এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সময়ে বিচার চেয়েছেন।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয় পরিচয়ে কেউ অপকর্ম করলে কোন ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বললেন, আবরার হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, অল্প কয়েকজনের অপরাধের জন্য পুরো সংগঠন দায়ী হবে না। অপরাধীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমরা কথার কথা বলছি না। কাজে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগে কোন অপরাধীর ঠাঁই হবে না। আমরা অপরাধ সমর্থন করি না, করব না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বুয়েট প্রশাসনের আরেকটু সতর্ক থাকার দরকার ছিলো। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না ডাক দিলে পুলিশ ভেতরে ঢোকে না। এ জায়গাটিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষের আরেকটু সতর্ক থাকার দরকার ছিলো। আরেকটু সতর্ক থাকলে হয় তো এ ধরনের ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। ভবিষ্যতে প্রশাসন ছাত্রদের প্রতি আরো নজর দেবে, দায়িত্ববান হবে বলে মনে করি।
আবরার হত্যাকাণ্ড যারা সংঘটিত করেছিল এদের প্রায় সবাইকে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ জন ১৬৪ করেছে (স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন)। আমি আগেও বলেছি আজও বলছি, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এ মামলার চার্জশিট দেয়া হবে, আশা করছি তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রততম সময়ের মধ্যে মামলা তদন্ত সম্পন্ন করবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির সকল ব্যবস্থা করা হবে।তিনি বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যেই জড়িত থাকুক না কেন এবং তাদের পরিচয় যাই হোক না কেন সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শেষ করা হবে।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ: বুয়েটের হত্যাকাণ্ড ন্যক্কারজনক অবিহিত করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত তারা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় এ জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। দেশে অবশ্যই ভিন্নমত থাকবে। ভিন্নমত ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক সমাজ হতে পারে না। ভিন্নমতের জবাব আক্রমণ করে হয় না। এটি আমাদের দল ও সরকার কেউই সমর্থন করে না।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আগে থেকে যদি শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও র্যাগিং বন্ধ করা হতো তা হলে আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো বর্বরোচিত ঘটনা ঘটত না। তিনি আরো বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, লজ্জিত। একজন মেধাবীর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। হত্যায় জড়িত হিসেবে যাদের নাম এসেছে, তাদের দ্রুত ধরা হয়েছে। অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম: হত্যাকারীরা যে লীগের হোক না কেন অপরাধ যিনি করবেন আইনের আওতায় তাকে আসতেই হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিষ্ঠুরতা। সরকারি পর্যায় থেকে অ্যাকশনটা খুব পরিচ্ছন্নভাবে দেখা গেছে। ঘাতকদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে, গ্রেফতার চলছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।




Discussion about this post