নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারো পেছালো সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। এ নিয়ে ৬৬ বার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছালো। আজ এই মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তা জমা দেয়নি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
একারণে আজ বুধবার (২৬ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস আগামী ৫ আগস্ট নতুন তারিখ ধার্য করেন।
আদালতে শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা ইউসুফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজেদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের রোমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন, তার এখন বদ্ধমূল ধারণা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সদিচ্ছার অভাবেই অগ্রগতি হচ্ছে না হত্যাকাণ্ডের তদন্তের। কারণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার পরিবারের সাথে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানালেও গত কয়েকবছর ধরে এবিষয়ে কোনো ধরণের যোগাযোগই করেনি।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলা হওয়ার পর প্রথমে এর তদন্তে নামে শেরে বাংলা থানা পুলিশ। চারদিনের মাথায় মামলা হাতবদল হয় ডিবি পুলিশের কাছে। এর ৬২ দিনের মাথায় ডিবি আদালতে ব্যর্থতা স্বীকার করলে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। দায়িত্ব নিয়েই সাগর ও রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে আবারো ময়না তদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা করে র্যাব। বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হলেও তদন্ত আর এগোয়নি।
কিন্তু এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ৬৫ বার সময় নিয়েছেন।
সেসময় এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করেছিলেন সাংবাদিক হারুন উর রশীদ, যিনি মনে করেন নানা কারণে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তদন্ত ব্যহত করার চেষ্টার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তদন্তের স্বচ্ছতা ও তদন্তকারীদের সদিচ্ছার বিষয়টি।
সেসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে, পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে তারা ক্লু খুঁজে পেয়েছেন, এমনকি পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছিলেন তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তারপরে আজ সাত বছরে পেরিয়ে গেলেও ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি।
সেসময় চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনার অনুসন্ধান করা সাংবাদিকদের অনেকে মনে করেন, তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত কয়েকবছর নীরবতা পালন করায় তদন্ত আরো বেশি ব্যহত হচ্ছে। তবে গণমাধ্যমে র্যাব অবশ্য সবসময়ই বলে এসেছে তদন্তের স্বার্থেই তারা এবিষয়ে মুখ খুলছেন না।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আট জন। অন্য আসামিরা হলো- বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।
Discussion about this post