মিনায় পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজি নিহতের ঘটনায় আরও ১৬ বাংলাদেশির খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনরা। এই ১৬ জন নিখোঁজের নাম, শাহেদা কাওসার (৪৮), বেহতারিন ইশরাত (৪৪), তামান্না বিনতে খালেদ (৩৬), সামসুন্নাহার মজুমদার (৭০), জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪০), আব্দুল মজিদ (৭০), নূর জাহান, হাজেরা খাতুন, হাবিবুর রহমান, আব্দুল মজিদ প্রামাণিক তার স্ত্রী নাসিমা বেগম, হেলাল উদ্দীন (৪০), শেলীনা বেগম (৪০), মো. মুজিবুর রহমান (৬০), খালেদা আক্তার (৩৫) এবং মো. মোস্তফা কামাল (৪৩)। এর মধ্যে হাজেরা-হাবিবুর এবং মজিদ-নাসিমা দম্পতি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিনার বড় জামারাতে পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজির মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন বাংলাদেশি নিহত ও ১৫ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আহ্বানের পর সব শেষ রাতে ফোন করেন নাজসুল হুদা। তার দেওয়া তথ্য স্বামী-স্ত্রী দুইজনই নিখোঁজ, যাদের নাম আব্দুল মজিদ প্রামাণিক। পাসপোর্ট নং বিই ০৫৬২১১০। স্ত্রী নাসিমা বেগম। পাসপোর্ট নং বিই ০৫৮১৪৪৬। নাসিমা বেগমের ভাতিজা নাজসুল হুদা বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন। নিখোঁজদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানা, তামাই গ্রামে।
এদিকে, হাজি হেলাল উদ্দীন (৪০) নিখোঁজ। তার বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদীর খলিফার হাটে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি হাসান ট্রাভেলসের মাধ্যমে বিমানের ফ্লাইটে করে সৌদি যান। তার ভায়েরা এমদাদ উল্লাহ বাংলানিউজকে ফোন করে খোঁজ না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিখোঁজ হেলাল উদ্দীনের ফোনে অনেক চেষ্টা করে না পেয়ে সৌদিতে সঙ্গে যাওয়া হাসান ট্রাভেলসের মওলানা মাহবুব উদ্দীনের মোবাইলে ফোন করা হয়। এতে রিং হলেও কেউ ধরে না।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ৩নং ওয়ার্ডের মো. জহির উদ্দীনের (৬০) স্ত্রী শেলীনা বেগম (৪০) নিখোঁজ। তার ছোট ছেলে মো. আশরাফুল করিম রোকন বাংলানিউজে ফোন করে বিষয়টি জানান। তিনি জানান, তার বাবা-মা দুইজন একত্রে হজে যান। মিনার সে ঘটনার পর তারা বাবা নিজেকে স্থানীয় হাসপাতালে পেলেও স্ত্রী শেলীনাকে আরও পাওয়া যায়নি। তারা মোবাল্লিক হজ এজেন্সির মাধ্যমে সেখানে যান। তাদের ছেলে আরও জানান, এখন সৌদিতে অবস্থান করা জহির উদ্দিন (৬০) খোঁজে আছেন স্ত্রী শেলীনার। এ বিষয়ে তার পরিবার সৌদি দূতাবাসের সহায়তা চেয়েছেন। এছাড়া দেশে থাকা ছেলে আশরাফুল করিম রোকনের ফোনেও যোগাযোগ করা যেতে পারে ০১৭৪-৭৮৮০৬৬৩।
রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে ফোন করেছিলেন মো. মোবিনুর রহমান। তিনি জানান, সৌদির মিনায় তার বাবা-মা ক্যাম্পে ছিলেন। বাবা মো. মুজিবুর রহমান (৬০) ও এলাকার প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪০) এক সঙ্গে পাথর নিক্ষেপে বের হন। এরপর থেকে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে তার মা তহুরা রহমান (৫৬) মিনার ৫২০নং ক্যাম্পে আছেন। এ বিষয়ে নিখোঁজের পরিবার সহায়তা চেয়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে ফোন নম্বর বড় ছেলে মো. মোবিনুর রহমান ০১৭৩-০৪৪৪৬২৪। এছাড়া ছোট ছেলে তানভিনুর রহমান ০১৭১-৩৩৯৯২২৪।
ফেনী থেকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টের মাধ্যমে জানা যায়, মিনায় পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজি নিহতের ঘটনায় খালেদা আক্তার (৩৫) নামে এক নারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়ি ফেনীর পরশুরামের রাজেশপুর এলাকায়। খালেদার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সৌদি আরব থেকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন তার স্বামী জয়নাল আবদীন ৷ তারা স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে হজে যান। স্বামীর ভাই (দেবর) জসিম উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে জানান, দুইজন মিলে এবার পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি গিয়েছিলেন। মিনার ঘটনায় স্বামী জয়নাল আবদীন সামান্য আহত হন তবে স্ত্রী খালেদা আক্তারকে এরপর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মেইলে রাতে ঢাকা থেকে মেইল করেছেন মনজুরুল মোরশেদ অভি। তিনি জানান, তার মামাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মামার নাম মো. মোস্তফা কামাল (৪৩)। ঢাকায় তাদের বাড়ি উত্তরায় আর গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লায়। তার পাসপোর্ট নম্বর ১৩৮৭০৭৩। ইমেইল-ovi009bd@yahoo.com।
রাজধানীর গুলশান থেকে ভাবী শাহেদা কাওসার, তার ভাবীর দুই বোন বেহতারিন ইশরাত ও তামান্না বিনতে খালেদ এবং শাহেদা কাওসারের মা সামসুন্নাহার মজুমদারের নিখোঁজের বিয়ষটি ফোনে জানান- আব্দুস সাত্তার।
নিখোঁজ শাহেদা কাওসারের পাসপোর্ট নম্বর- বিই ০৬৪৯৫৬৪। তিনি রাজধানীর গুলশান-২’র অফিসার্স কোয়ার্টারের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশারের স্ত্রী। বাকি তিনজনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার চকইয়া গ্রামে। এদের মধ্যে বেহতারিন ইশরাতের পাসপোর্ট নম্বর- এই ০২৮৯৩৮৮, তামান্না বিনতে খালেদের পাসপোর্ট নম্বর- এএ ২৮৬১১০৬ ও সামসুন্নাহার মজুমদারের পাসপোর্ট নম্বর- বিই ০২৮৫৩২।
আব্দুস সাত্তার আরও জানান, তার ভাবীর ভাই সাজ্জাদ খালেদ মুরাদ (৩০) নিখোঁজদের সঙ্গে মক্কায় গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন তারা। তিনি বলেন, সাজ্জাদ খালেদ মুরাদ আমাদের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে নিখোঁজদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এরপর শাহেদা কাওসারের ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে এক পর্যায়ে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে নিখোঁজ আব্দুল মজিদের বাড়ি নীলফামারীতে। তার ভাতিজা রায়হান বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর চাচা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মিনায় এ ঘটনার পর থেকে ওনার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে চাচার ফোন নাম্বারটি এখনো খোলা রয়েছে। ফোন দিলে অনেক সময় আরবিরা রিসিভ করছেন। কিন্তু তারা কোনো তথ্য দিতে পারছেন না।
এছাড়া হাবিবুর রহমান ও হাজেরা খাতুনের নিখোঁজের বিষয়টি বাংলানিউজকে জানান তাদের মেয়ে জামাতা ওয়াসিম। তারা রাজধানীর উত্তরায় থাকেন।
তিনি বলেন, হাজেরা খাতুনের পাসপোর্ট নম্বার বিএফ- ০২৩০৮৮। তারা দু’জন ইস্ট বাংলা নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে তারা সৌদি আরবে যান। তিনি আরও বলেন, আব্দুল মজিদের কাছে একটি মোবাইল ফোন +৯৬৬৫৯১৫০৩৬৭৩ রয়েছে। সৌদি আরবে যাওয়ার পর নম্বরটি খোলা থাকলেও এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না।
নিখোঁজ হাজি নূর জাহান বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ চর হোগলা এলাকার শফিক আলমের স্ত্রী। তার পাসপোর্ট নম্বর এজি ২০৫৬০৫২ এবং হাজি নম্বর০৩৬৩২৫৩। শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে নিখোঁজের বিষয়টি জানান তার ছেলে রাসেল।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অন্যান্য হাজিদের সঙ্গে মিনায় যাওয়ার পথে নূর জাহান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এসময় তিনি বাংলাদেশে ফোন করে তার ছেলের সঙ্গে কথাও বলেন। রাসেল তাকে মক্কায় ফিরে কোনো হোটেলে উঠার পরামর্শ দিলে নূর জাহান জানান, তার মতো আরও এক নারী পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যেতে না পারলে হোটেলে উঠবেন, আশ্বাস দেন নূর জাহান।
এরপর দুপুরে রাসেলের মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস আসে। সে এসএমএসে বলা হয়, তার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না।




Discussion about this post