ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে নিক্সন চৌধুরীর আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে নিক্সনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুর দেড়টায় শুরু হওয়া আবেদনের শুনানিতে নিক্সনের পক্ষে তার আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক আদালতের সামনে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়া মোবাইলে কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে কি-না’ বলে প্রশ্ন তোলেন। তিনি এটিকে ইলিগ্যাল (অবৈধ) বলেও উল্লেখ করেন।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, ‘কেউ একজন সংসদ সদস্যের বক্তব্য রেকর্ডিং করতে পারে কি-না’।
আদালত তখন আইনজীবীর কাছে জানতে চান, এটি কি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা?
জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘জ্বি না, এটি এ (ডিজিটাল নিরাপত্তা) আইনের মামলা নয়। এটি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলা। তবে রেকর্ড করে তারা সংবিধানিক অধিকার অর্থাৎ গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে’।

এর আগে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে নিক্সন চৌধুরী জামিন নিতে হাইকোর্টে এসে পৌঁছান। সেসময় তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা মামলা আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব। আমার বক্তব্যের যে অডিও রেকর্ডিংটি প্রকাশ হয়েছে, সেটি সুপার এডিটেড। এটা অসত্য জিনিস, এটাকে এডিটিং করে বানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক কীভাবে এই ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। আমার বক্তব্যের রেকর্ডিংটা, যতটুকু কথাই আছে, জেলা প্রশাসকের কাছেই আছে। উনার মাধ্যমে এইটা কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এলো, সেটারও বিচার হওয়া উচিত। আইসিটি অ্যাক্টে এটাও তো অপরাধ।’
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগে গত ১৫ অক্টোবর নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে ইসি। জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার নোয়াবুল ইসলাম চরভদ্রাসন থানায় এ মামলা করেন।
১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হুমকি এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন নিক্সন চৌধুরী। এ ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অশোভন আচরণের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠি পর্যালোচনা করে কমিশন সচিবালয় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী মামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে গালাগাল করেন।
নির্বাচনের দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক ব্যক্তিকে আটক করেন। এ ঘটনায় ইউএনওর মুঠোফোনে তাকে ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখান নিক্সন। তা ছাড়া নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী কার্যকলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন খানম জানান, মামলাটি তদন্তের জন্য থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়ারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মামলার তদন্ত শেষ করা হবে।
Discussion about this post