নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার যতই শেষের দিকে যাচ্ছে, রাজধানীর বস্তিতে বাস করা লোকজনের মধ্যে হতাশা ততই বাড়ছে। একপক্ষীয় নির্বাচনী প্রচারে ভোটার হিসেবে তারা কোনো গুরুত্বই পাচ্ছেন না। আগের মতো শীতার্তদের দিকেও তাকাচ্ছেন না কেউ।
জানা গেছে, রাজধানীর বড় বড় বস্তিতে বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ক্যাম্প, পোস্টার, প্রচারপত্র কিংবা অন্য কোনো তৎপরতা নেই। একতরফা প্রচারে করাইল, বনানী-মহাখালী, ভাসানটেক, কারওয়ানবাজার-তেজগাঁও রেলপথ এলাকার বস্তিতে বিরোধী শিবিরের কোনো নির্বাচনী প্রচার দেখা যায়নি। এতে এসব বস্তির ভোটাররা নিজেদের গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হতাশা কাজ করছে।
বস্তিবাসীরা মনে করছেন, প্রার্থীদের কাছ থেকে তারা যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছেন না। ভোটার হিসেবে আগের নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীরা তাদের যেভাবে গুরুত্ব দিতেন, এবার তেমনটি ঘটছে না। বরং তুচ্ছই থেকে যাচ্ছেন। তারা বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটারদের ওপর তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতেন। কখনও কখনও তাদের মাঝে শীতের পোশাক ও কম্বল বিলি করতেন। এখন পর্যন্ত ধানের শীষের কোনো প্রার্থী তাদের কাছে আসেননি। এ কারণেই ভোটার হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে তারা গুরুত্ব হারিয়েছেন।
তবে বস্তিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার চলছে পূর্ণোদ্যমে। দলটির প্রার্থীরা নির্বাচনী ক্যাম্প করেছেন, পোস্টার সাঁটিয়েছেন ও প্রচারপত্র বিতরণ করেছেন। ছোট আকারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পোস্টার-প্রচারপত্রও দেখা গেছে।
৬০ বছর বয়সী আবদুল আলী করাইল বস্তিতে বাস করছেন। তিনি বলেন, সাধারণ নির্বাচনের আগে বস্তিবাসীর মধ্যে শীতের পোশাক, কম্বল, শাড়ি বিতরণের একটি স্বাভাবিক রেওয়াজ ছিল। কিন্তু ধানের শীষের প্রার্থীরা মাঠে অনুপস্থিত থাকায় এবার সেই দৃশ্য দেখা যায়নি। এবার তাদের মাঝে কোনো প্রার্থীই শীতের পোশাক কিংবা কম্বল বিতরণ করেননি। কিন্তু নির্বাচনের আগে শীতের পোশাক পাওয়ার আশা আমাদের ছিল। ভেবেছিলাম-শীতে আমাদের দুর্ভোগের কথা ভেবে তারা সাহায্য করবেন।
আরেক বস্তিবাসী বলেন, নির্বাচনের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের কাছ থেকে বস্তির লোকজন বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এবারে একপক্ষীয় নির্বাচনে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি অনেক ভোটার জানেন না, এবারের নির্বাচনে তাদের আসনে ধানের শীষের প্রতীকে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাসানটেক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন। আর তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, রমনার কিছু অংশ, শেরেবাংলা নগর ও হাতিরঝিল মিলিয়ে ঢাকা-১২ আসন। এ দুই আসনের বড় একটি অংশ বস্তিতে বসবাস করেন। সূত্র জানায়, করাইল বস্তিতে ২৬ হাজার ৬০০ ভোটার বাস করেন, যাদের অধিকাংশই নারী। আর ভাসানটেকে বাস করেন ৯ হাজার ৮০০।
করাইল বস্তি উন্নয়ন কমিটির ইউনিট-১ এর সভাপতি মাওলানা আবদুস সোবহান বলেন, আমি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কোনো নির্বাচনী তৎপরতা দেখিনি। যদিও এ বস্তিতে তাদের অনেক সমর্থক রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর শীতে আওয়ামী লীগের নেতারা বস্তির গরিব মানুষের কাছে শীতের পোশাক ও কম্বল বিতরণ করেন। এবারও তারা সেটি করবেন, যখন শীত ভালোভাবে নামবে।
ভাসানটেক বস্তির চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাগর মিয়া বলেন, বস্তিতে বিএনপির সমর্থকরা থাকলেও তারা কোনো নির্বাচনী প্রচার চালায়নি। ভাসানটেক বস্তির কয়েক অধিবাসী বলেন, ধানের শীষের কর্মীরা ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করতে এলে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে পিছু হটেছেন।




Discussion about this post