মিয়ানমারে সহিংসতায় বাবা- মা হারানো রোহিঙ্গা শিশুদের তালিকা তৈরি করছে সরকার। তালিকাভুক্ত শিশুদের জন্য কল্যাণকর ও মানবিক পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে সরকার। প্রাথমিকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা সরকার ভাবছে।
এ উদ্দেশ্যে গঠিত ৫টি টিম আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করছে।
এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের তালিকাভুক্ত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টিম এখন উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও তালিকা তৈরির কর্মসূচির সমন্বয়ক মো. শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে রোহিঙ্গাদের জন্য করণীয় নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার ১৭ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুসারে এতিম শিশুদের তালিকা করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এতিম শিশুদের তালিকা প্রণয়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমানকে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে। তিনজন উপ-পরিচালককে সমন্বয়ক করা হয়েছে। এছাড়া একজন উপ- পরিচালককে ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ৫টি টিম।
সমন্বয়ক শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, টিমের সুপারভাইজার হিসেবে আছেন একজন কর্মকর্তা। তার অধীনে আছেন আরও ৬ জন। এসব টিম আলাদা- আলাদাভাবে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করছেন।
রোববার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালক কক্সবাজারে এসে তালিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন।
সত্যিকারের যারা এতিম তারা যেন তালিকাভুক্ত হয় এবং ভুল তথ্য দিয়ে কেউ যাতে তালিকায় ঢুকে না পড়ে সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
শহীদুল জানালেন, নির্ধারিত ফরমে প্রায় ৬০ ধরনের তথ্য লিপিবদ্ধ করা হবে। রোহিঙ্গা শিবিরে যেসব সরকারি- বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে তাদের কাছ থেকে শিশুর তথ্য নেওয়া হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে।
‘শিশুটি সত্যিই পিতৃমাতৃহীন কি না, বাবা- মা হারিয়ে কার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে, বিশ্বাসযোগ্য বক্তব্য পেয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই শিশুটিকে তালিকাভুক্ত করা হবে। এরপর আমরা তাদের একটা পরিচয়পত্র দেওয়ার চেষ্টা করব।’
টানা দুই সপ্তাহ তালিকাভুক্তির কাজ করার কথা জানিয়েছেন শহীদুল ইসলাম।
এতিম শিশুদের তালিকাভুক্তির কাজকে স্বাগত জানালেও এতে শংকাও দেখছেন শিশু সংগঠন খেলাঘরের কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো. কলিমউল্লাহ।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সহানুভূতি ও সাহায্য- সহযোগিতা পাবার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা বিভ্রান্ত করতে পারে। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে। আর তালিকা হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু কোনোভাবেই যেন তাদের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না হয়। কারণ এই শিশুরা পোলিও, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে আছে। আমাদের শিশুরা কিন্তু নিরাপদ। বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।




Discussion about this post