
বিডি ল নিউজ: সেমিফাইনালের অবিশ্বাস্য থ্রিলার৷ ডেইল স্টেইনকে মিড অনের ওপর দিয়ে মারা গ্র্যান্ট এলিয়টের বিশাল ছক্কা অকল্যান্ডের
গ্যালারিতে আছড়ে পড়া মাত্রই ইতিহাস গড়ল নিউজিল্যান্ড। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চার উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল কিউইরা৷ এই প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড৷

ফের ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মের গেরোয় আটকাল ডি’ভিলিয়ার্সের দলের ভাগ্যের চাকা৷ এবারও সেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের বিশ্বকাপে ১৯৯২-তে দুরন্ত খেলেও ডাকওয়ার্থ লুইস সিস্টেমের জাঁতাকলে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। এবারও সেই ট্র্যাজেডিরই যেন পুনরাবৃত্তি। চোকার্স তকমা সেঁটেই রইল তাদের ঘাড়ে। কিউই অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাকালাম আর এলিয়টের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং আর কোরি অ্যান্ডারসনেরও যোগ্য সঙ্গতে এই প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড। ১৯৯২-এ মার্টিন ক্রো-র নিউজিল্যান্ড যা পারেনি, তাই করে দেখালেন ম্যাকালামরা৷

প্রথমে ব্যাট করে এদিন ৪৩ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮১ তোলে প্রোটিয়ারা৷ ডেভিলিয়ার্স ৪৫ বলে ৬৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ব্যাটে ডেভিলিয়ার্স ছাড়াও ঝড় তুলেছিলেন ডেভিড মিলারও। তিনি ১৮ বলে ৪৯ রান করেন।
ইনিংসের শুরুতে প্রথমে পরপর উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লেও ডি’ভিলিয়ার্স, মিলার ও দু’প্লেসির মারকুটে ব্যাটিংয়ে স্কোর ২৮১ পর্যন্ত পৌঁছয়৷দু’প্লেসি ১০৭ বলে ৮২ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর যখন ৩৮ ওভারে ৩ উইকেটে ২১৬ রান তখন রান বৃষ্টির কারণে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ম্যাচ৷ প্রায় দেড় ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ওভার সংখ্যা ৫০ থেকে কমে হয় ৪৩। নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ২৮১ রান তোলে তারা। ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ২৯৮৷ টানটান থ্রিলার শেষে মাত্র এক বল বাকি থাকতে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় কিউইরা
এদিনের ম্যাচ ঘিরে অকল্যান্ডে যে আবেগ দেখা গেল তা নিউজিল্যান্ডে অভূতপূর্ব। ক্রিকেট ঘিরে কিউইদের এই উত্তুঙ্গ আগ্রহের মাঝে টানটান থ্রিলার হয়ে দাঁড়াল সেমিফাইনাল। শেষ ওভার জয়ের জন্য ১২ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের। বল করতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন স্টেইন। কিন্তু লড়াই থেকে সরে যাননি তিনি। বহু যুদ্ধের নায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি তাঁর বলে বাউন্ডারি মেরে জয়ের সমীকরণ নামিয়ে আনেন। তখন প্রয়োজন ২ বলে ৫ রান। কিন্তু তাঁর পরের বল অফস্ট্যাম্প থেকে পুল করে মিড অনের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকা-জাত এলিয়ট। তাঁর ৭৩ বলে ৮৪ রান দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।
কোয়ার্টার ফাইনালে সেরকম জমাট লড়াই দেখা যায়নি বলে অনেকেই আক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু সেই আক্ষেপ সুদে-আসলে উশুল করে দিয়েছে এদিনের সেমিফাইনাল ম্যাচ। রান তাড়া করতে নেমে ম্যাকালাম শুরু থেকেই লড়াইটা পৌঁছে দেন প্রোটিয়া শিবিরে। ২৬ বলে ৫৯ রান করেন তিনি। তাঁর ইনিংসে রয়েছে ৮ টি বাউন্ডারি ও ৪ টি ওভার বাউন্ডারি। স্টেইনের বলে তিনি যখন আউট হন তখন দলের রান পৌঁছে গিয়েছে ৬.১ ওভারে ৭১-এ। এরপর কে উইলিয়ামসন অল্প রানে ফিরে যান। কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিশতরানকারী মার্টিন গাপ্তিল এদিন ৩৮ বলে ৩৪ রান করে রান আউট হয়ে যান। উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রস টেলরও(৩০)। এরপর কোরি আন্ডারসনের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০৩ রান যোগ করেন এলিয়ট। কিন্তু জয়ের জন্য যখন ৩১ বলে ৪৬ রান প্রয়োজন তখন আন্ডারসন ৫৭ বলে ৫৮ রান করে আউট হন। এল রোঞ্চিকে ফিরিয়ে কিউই শিবিরে ফের আঘাত হানেন স্টেইন। তখন কিউইদের দরকার থিল ১৭ বলে ২৯ রান। এরপর ভেট্টোরিকে ক্রিজে আসেন। এক বল থাকতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯৯ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। সেইসঙ্গে প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় তারা। শেষ ওভারের আগের ওভারের শেষ বলে এলিয়টের টপ এজে লেগে ওঠা বল স্কোয়ার লেগে ফেলে দেন প্রোটিয়া ফিল্ডাররা।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৬ বার সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এই প্রথম তারা ফাইনালে উঠল। অন্যদিকে, তিনবার সেমিফাইনালে উঠেও একবারও ফাইনালে যেতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা।
মেলবোর্নে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড আগামী বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে জয়ী দলের বিরুদ্ধে খেলবে।’এবিপি আনন্দ
Discussion about this post