বিডি ল নিউজঃ আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মর্মে আদেশ দেন যে, যেসব বিদ্যালয় মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষা বোর্ড-নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ফি নিয়েছে, তা ২০ জানুয়ারির মধ্যে ফেরত দিতে হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে সময় সাপেক্ষে ২০টি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ আদালতের আদেশে বলা হয়, ‘আদালত মনে করেন, সচিব ও ১০টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এই মর্মে আদেশ জারি করবেন যে সমগ্র বাংলাদেশে যেসব বিদ্যালয় সরকার-নির্ধারিত এসএসসি পরীক্ষার ফি এবং তথা আইনত আদায়যোগ্য ফি-বহির্ভূত কোনো বাড়তি ফি আদায় করিয়াছে, সকল ফি আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে ফেরত প্রদান করিবে। অন্যথায় ওই সব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং কমিটি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। এইসব ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা পরবর্তী তিন বছরের জন্য কোনো ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গভর্নিং বডির নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হইবেন।’
মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিতে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ বাড়তি ফি আদায় কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১০ নভেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট।
২৬টি বিদ্যালয়ের প্রধান ও কমিটির সভাপতিকে তলব
‘আট গুণ বাড়তি ফি আদায়’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরম পূরণ বাবদ নির্ধারিত ফি এক হাজার ৪০০ টাকা। অথচ বাড়তি ফি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে রুল দেওয়া হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম ও স্বরূপ কান্তি দেব। ঢাকার ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে আজ আদালতে হাজির হতে আদেশ দেওয়া হয় ১৪ ডিসেম্বর।
অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতে অতিরিক্ত ফি নেওয়া ২৬টি বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বোর্ডের প্রতিবেদন অনুসারে বেশি টাকা আদায় করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফায়দাবাদের দ্য চাইন্ড ল্যাব স্কুল, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর আলিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর বাঙলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়, জান্নাত একাডেমি, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, আজমপুরের হাজী বিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, লালবাগের রায়হান কলেজ, উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি, ওয়স্টে অ্যান্ড হাইস্কুল, আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি গভ. ল্যাব হাইস্কুল, ওয়াই ডব্লিউ সি এ স্কুল, হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও মোহাম্মদপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়।
আদালত সূত্র জানায়, ২৬টির মধ্যে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অতিরিক্ত হিসেবে নেওয়া টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দিয়েছে। বোর্ডের আইনজীবী মিজানুর রহমান জানান, এই ছয়টি প্রতিষ্ঠান বোর্ডকে লিখিতভাবে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো গভ. ল্যাব হাইস্কুল, ওয়াই ডব্লিউ সি এ স্কুল, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, আজমপুরের হাজী বিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, জান্নাত একাডেমি ও ফায়দাবাদের দ্য চাইন্ড ল্যাব স্কুল। এ ছাড়া আরও সাতটি বিদ্যালয় বেশি টাকা নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বোর্ডের কাছে। বাকি ১৩টি বিদ্যালয় জবাবই দেয়নি।
সূত্রঃ প্রথম আলো
Discussion about this post