বিডি ল নিউজঃ প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না এসকে সিনহার। গভীর কোন ষড়যন্ত্র ছিলো কিনা সেটা হয়ত এখন চিন্তার বিষয়। তাই, রেশ কাটছে না এখনো এসকে সিনহার ইস্যু নিয়ে।
আলোচিত বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মিথ্যা ঘোষণা ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চার কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করে তা রাষ্ট্রের এক সময়ের ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও মোহাম্মদ শাহজাহান নামের এ দুই ব্যবসায়ী রোববার (৬ মে) সকাল ৯টায় সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন কমিশনের কর্মকর্তা (পরিচালক) সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
প্রাপ্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে এই দুই ব্যবসায়ীকে গত ২৫ এপ্রিল তলব করে দুদক।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বলতে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নাম বলছেন।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখায় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য মেলে। আড়াই বছরে ওই অ্যাকাউন্টে জমা হয় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। বেতন ছাড়াও লাখ এবং কোটির হিসাবে টাকা জমা হয়েছে ২৬ বার। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর দু’টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে দুই কোটি করে চার কোটি টাকা জমা হয়। আগের দিন ৮ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মোহাম্মদ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার ঋণ অ্যাকাউন্ট থেকে এই চার কোটি টাকার পে-অর্ডার বিচারপতি সিনহার নামে ইস্যু করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, শাহজাহান ও নিরঞ্জনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পে-অর্ডার ইস্যুর দু’দিন আগেই ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দু’টি ঋণ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। দু’টি অ্যাকাউন্টের তথ্য ফর্মেই ঋণ আবেদনকারীদের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে লেখা হয় প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়ির ঠিকানা (সেক্টর-১০, সড়ক-১২, বাড়ি-৫১)। দু’জনেরই স্থায়ী ঠিকানা বিচারপতি সিনহার সে সময়ের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) রঞ্জিতের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি এলাকা। রঞ্জিত বর্তমানে সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে তিনি বিচারপতি সিনহার উত্তরার বাড়িতেই থাকতেন।
বিচারপতি সিনহাকে টাকা দেওয়া শাহজাহানের (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৯৩১২৫৪৭৪৩১২০৩০) বাবার নাম মৃত আমির হোসেন। ঋণ আবেদনে তিনি নিজের পেশা হিসেবে চাকরি ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। তার ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) নেই বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি। ৬ নভেম্বর তার খোলা ঋণ অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৩৫০০১৫৭২৮৬। ৮ নভেম্বর বিচারপতি সিনহার নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডারের আবেদন করেন শাহজাহান। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে পে-অর্ডার (পে-অর্ডার নম্বর-০০৯২০৪৭) ইস্যু করে ব্যাংক। এরপর এই অ্যাকাউন্টে আর কোনও লেনদেন হয়নি।
বিচারপতি সিনহার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া অপর ব্যবসায়ী নিরঞ্জনের (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৭৬৯৩১২৫৪৭০০০০০১) বাবার নাম গোলক চন্দ্র সাহা। তার পেশা উল্লেখ নেই ব্যাংকের তথ্য ফরমে। উল্লেখ নেই টিআইএন নম্বরও। একই তারিখে তার ঋণ অ্যাকাউন্ট (অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১৭৩৫০০১৫৭২২৪) খোলার দু’দিনের মাথায় একইভাবে ৮ নভেম্বর বিচারপতি সিনহার নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যুর আবেদন করেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতে পে-অর্ডার ( পে-অর্ডার নম্বর- ০০৯২০৪৬) ইস্যু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শাহজাহানের মতোই নিরঞ্জনের অ্যাকাউন্টেও এরপর আর কোনও লেনদেন হয়নি।
Discussion about this post