নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রেফতারের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সদ্য বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে। কারাগারে যে ওয়ার্ডে নিয়ে রাখা হয়েছে সম্রাটকে তার নাম ‘কষ্টের আমদানি’। সেখানে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে তাকে।
রবিবার (৭ অক্টোবর) রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নেয়া হয় সম্রাটকে। এর আগে এদিন ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে আটক করে র্যাব।
আটকের পর সম্রাটকে ঢাকায় এনে রোববার দুপুরে তার কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় সেখান থেকে দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, অবৈধ অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও টর্চার করার ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
সম্রাটকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। জুয়া খেলাই তার পেশা ও নেশা। প্রতি মাসে ঢাকার বাইরেও যেতেন জুয়া খেলতে।
গত মাসে রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরু থেকেই নজরদারিতে ছিলেন সম্রাট। সম্রাট কবে গ্রেফতার হবেন সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে দেশবাসী। তবে সে সময় সম্রাটকে না ধরা হলেও ধরা হয় রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীমকে। তার কার্যালয় থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়।
শামীমকে রিমান্ডে নিলে সেখানেও সম্রাটের যোগসূত্রিতা পাওয়া যায়। জানা যায়, সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই গণপূর্ত অধিদফতরে ক্ষমতা খাটিয়ে শত শত কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নিতেন জিকে শামীম।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনো খালেদ ও টেন্ডার শামীমের অবৈধ আয়ের ভাগ পেতেন সম্রাট। এবং রাজধানীর ১৭টি ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন ৪০ লাখ টাকা চাঁদা পেতেন সম্রাট। এসব টাকা নিয়ে সম্রাট তার সঙ্গী আরমানকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যেতেন জুয়া খেলতে। সেখানে এসে যুক্ত হতেন ফেরারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিশান ও নাদিম। এভাবেই প্রকাশ্যে চলে আসে সুন্দর অবয়বের আড়ালে সম্রাটের কুৎসিত জগৎ।
একপর্যায়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত একটি আদেশ দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়। তার ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়। তবুও সম্রাট ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযান শুরুর প্রথম তিন দিন দৃশ্যমান ছিলেন তিনি। ফোনও ধরতেন। গুঞ্জন চলছিল, এ সময় কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়েও অবস্থান করছিলেন সম্রাট। সে সময় ভূঁইয়া ম্যানশনের চারিপাশে শতাধিক যুবক তাকে পাহারা দিয়ে রাখতে দেখা গেছে। এর পর সম্রাট হাওয়া হয়ে যান। সম্রাট কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়।
সম্রাটের গ্রেফতার কেন বিলম্বিত হচ্ছে সে প্রশ্ন জাগে জনমনে। গুজব রটে, সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেছেন সম্রাট। এমন পরিস্থিতিতে জনগণকে আশ্বস্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সেতুমন্ত্রী জানান, ওয়েট এ্যন্ড সি। অবশেষে সেই অপেক্ষার পাল শেষ হয়। রোববার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সহযোগী আরমানসহ গ্রেফতার হন সম্রাট।
বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে সাধারণ বন্দি হিসেবে ‘কষ্টের আমদানি’ নামে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে বৃহিষ্কৃত এই যুবলীগ নেতাকে।




Discussion about this post