বিডি ল নিউজঃ মন্ত্রিসভা ও ক্ষমতাসীন দল থেকে অপসারিত আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আজ মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁর পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়নি। পরে ঢাকার মহানগর হাকিম আতিকুর রহমান তাঁকে কারাগারে পাঠান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকা ও দেশের ১৮টি জেলায় ২২টি মামলা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ধানমণ্ডি থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, লতিফ সিদ্দিকী আত্মসমর্পণ করেছেন।
২ অক্টোবর এ্যাডভোকেট আবেদ রাজার করা একটি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে। ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুর রহমান তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। এ সময় লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে কোনো জামিনের আবেদন করেনি। মামলার বাদী এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা বলেন, লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছে তা সারা মুসলিম জাহানকে অপমান করেছেন। আদালতের কাছে লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। আদালতের হাজতখানা থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানযোগে কারাগারে নেওয়ার সময় আইনজীবীরা প্রিজন ভ্যানে জুতা মারতে থাকেন। পরে আইনজীবীরা আদালত চত্বরে মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে বলা হয়, ‘নাস্তিক’ লতিফ সিদ্দিকীর মুখে জুতা মার তালে তালে। এ সময় কয়েকজনকে থুথু মারতে দেখা যায়। এর আগে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) মঙ্গলবার দুপুরে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন। তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আমরা আদালতে হাজির করেছি।’
ভারত থেকে রবিবার রাতে দেশে ফিরেন লতিফ সিদ্দিকী। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার রাজধানীতে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন ইসলামিক দল। এমনকি বুধবারের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা না হলে বৃহস্পতিবার হরতালের হুমকি দেয় হেফাজতে ইসলাম। এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর আত্মসমর্পণের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। এখন তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতারের দাবিতে ইসলামী দলগুলোর হরতাল ডাকা ভিত্তিহীন। প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তৃতায় একপর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তবলীগ জামাতের ঘোরতরবিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গিয়েছে। তাদের কোনো কাম নাই। তাদের কোনো প্রোডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন করতেছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা নিয়ে ওখানে দিয়ে আসছে। এ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।’
হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিবাদী আরও বলেন, ‘আবদুল্লাহপুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে। তারাতো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করল যে, তাহার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার এক সঙ্গে মিলিত হবে এবং এর মধ্যে দিয়ে একটা আয়ের ব্যবস্থা হবে।’ লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও কটূক্তি করেন। তার এ বক্তব্য বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় তা পবিত্র ইসলাম ধর্মের ওপর সরাসরি আঘাত এবং জয়কে নিয়ে কটূক্তি করায় এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা ২ অক্টোবর এ মামলাটি করেন।
Discussion about this post