নিজস্ব প্রতিবেদক: অনলাইন ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে সেলিম প্রধানের ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। পাশাপাশি আরও তিনজনকে একই দণ্ড প্রদান করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি তিনজন হলেন- সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. রুমন, সহযোগী মো. আক্তারুজ্জামান ও মামুন। মঙ্গলবার র্যাব-১ এ অভিযান পরিচালনা করে।
র্যাব সেলিম প্রধানের গুলশান ও বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ২৮ লাখ টাকা, ৮ কোটি টাকার চেকসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি অর্থ ও অনলাইন ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
এ সময় র্যাবের সুজয় কুমার সরকার বলেন, অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সারওয়ার আলম। অভিযানে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘অনলাইনে ক্যাসিনোর টাকা একটি গেটওয়েতে জমা হয়। এই গেটওয়ে থেকে তিনটি ব্যাংকে টাকা যায়। ব্যাংক তিনটি হলো, বিদেশি ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন এবং দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক দি সিটি ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক।
এর আগে থাই এয়ারলাইন্সে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে আটক সেলিমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতভর গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ বাসায় অভিযান চলে। উদ্ধার হয় ৭ লাখ টাকা। পরে সেখান থেকে বনানীর আরেকটি বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।
সোমবার দুপুরে ব্যাংকক পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড্ডয়নের আগে থাই এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাস থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব। আটক সেলিম প্রধান বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার সহযোগী বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত লোকমানের হাত ধরে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সেলিমের। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সখ্যতা গড়ে ওঠে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ একাধিক নেতার সঙ্গে। যেখানে কয়েকজন মন্ত্রীও আছেন।
এটাকে কাজে লাগিয়ে সেলিম উপরের সিড়ি বেয়ে ওঠেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। যার অধিকাংশ অর্থই তিনি থাইল্যান্ডে পাচার করেন।
গোপনসূত্রের খবরে জানা যায়, বর্তমানে সেলিম দুটি ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি। এরমধ্যে রুপালি ব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপী তিনি। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজস থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
সেলিম বাংলাদেশে খুবই কম আসেন। ব্যাংককেই বেশি থাকেন তিনি। সেখান থেকে গত দু’বছর যাবৎ বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী যে অনলাইন ক্যাসিনো সেটার বাংলাদেশ শাখা চালু করেন এই সেলিম। অনলাইন ক্যাসিনো সিন্ডিকেট বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন।
আটকের পর র্যাবের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, মাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকা ব্যাংককসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করতেন ঢাকার এ ডন। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় অবৈধ এ ব্যবসাকে রমরমা করেছেন বলে অভিযোগে উঠেছে।
এভাবে একের পর এক অপরাধ জগতে নাম লেখান সেলিম প্রধান। শুধু এখানেই শেষ নয়। অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার পাশপাশি পশুর খাটাল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন সেলিম। রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ অনলাইন ক্যাসিনো গুরু সেলিমের হাতে। এসব পয়েন্ট থেকে মাসে কম করে হলেও ২০ কোটি চাঁদা তোলেন সেলিম প্রধান।
জানা গেছে, সেলিম ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য প্রধানগ্রুপ নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর লাইভ ক্যাসিনো মার্কেট পি২৪ লিমিটেড নামের গেমিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে উল্লেখ আছে।
ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ। এখানে রয়েছে পি২৪ এর অফিস। আর কর্পোরেট অফিসের ঠিকানা- ডি-১ মমতাজ ভিশন, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডে ১১/এ ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশি ঠিকানা দেয়া আছে, ১৬৫/৯৬ মো ১০, সুরাসাক, শ্রী রাখা, চনবুন থাইল্যান্ড, ২০১১০।




Discussion about this post