নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা সেলিম প্রধানে বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ও মাদকদ্রব্য আইনে দুইটি মামলা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা দুটি করা হয়। এছাড়া সেলিমের গুলশানের বাসায় হরিণের চামড়া পাওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গুলশান থানার ডিউটি অফিসার এসআই সাদেক বলেন, র্যাব মানিলন্ডারিং ও মাদকদ্রব্য আইনে করা মামলার সব আলামতসহ থানায় জমা দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুইটি মামলা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বুধবার (২ অক্টোবর) ভোরে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মানিলন্ডারিং অপরটি মাদকদ্রব্য আইনে। এছাড়া, বন্য প্রাণীসংরক্ষণ আইনে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি আরো তিনজনকে একই দণ্ড প্রদান করা হয়। দণ্ড প্রাপ্ত বাকি তিনজন হলেন- সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. রুমন, সহযোগী মো. আক্তারুজ্জামান ও মামুন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, মামলায় সেলিম প্রধান ছাড়াও তার দুই সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এদিকে, সেলিম প্রধানের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর এক আদেশে তার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে সকল ব্যাংকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা সেলিম তার ভাইয়ের হাত ধরে ১৯৮৮ সালে জাপানে যান। সেখানে গিয়ে ভাইয়ের সাথে গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে জাপানিদের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর সেখান থেকে থাইল্যান্ড যায়। সেখানে গিয়ে শিপইয়ার্ডের একটি ব্যবসা শুরু করেন। পরে জাপানিদের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। যার নাম মিস্টার দু। এই মিস্টার দু সেলিমকে বাংলাদেশ একটি কনস্ট্রাকশন সাইট খোলার প্রস্তাবের পাশাপাশি বাংলাদেশ একটি অনলাইন ক্যাসিনো খেলার পরামর্শ দেয়। সেই সূত্র ধরেই টি-২১ ও পি-২৪ নামে অনলাইন গেমিং সাইট চালু করেন সেলিম। এর মূল কাজ হচ্ছে টাকার মাধ্যমে খেলা।
এর আগে, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি ছাড়ার আগমুহূর্তে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়। তিনি বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসায়ের মূলহোতা বলে জানায় র্যাব। এরপর সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর ১১/এ রোডে সেলিম প্রধানের অফিসে অভিযান শুরু করে র্যাব। এছাড়া, বনানীতে তার ব্যবসায়িক অফিসে অভিযান চালায় র্যাব।
অভিযানে ৪৮টি মদের বোতল; ২৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ নগদ টাকা; ২৩টি দেশের বৈদেশিক ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা সমমূল্যের মুদ্রা; ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক; অনলাইন ক্যাসিনো খেলার মূল সার্ভার; ৮টি ল্যাপটপ ও দুইটি হরিণের চামড়া জব্দ করা হয়।
সেলিমের ক্যাসিনো থেকে আয়ের টাকা যেত লন্ডনে
গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাথে বন্ধুত্ব থাকার পাশাপাশি অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের আয়ের অবৈধ টাকা লন্ডনে যেত বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই কথা স্বীকার করেন সেলিম। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার-বিন-কাশেম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। গত মাসে তার মায়ের মৃত্যু কারণে ৪ ঘণ্টার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়।
সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, বর্তমানে কারাগারে থাকা ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিনের ক্লোজ ফ্রেন্ড (ঘনিষ্ঠ) ছিলেন সেলিম। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছে- মামুনকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। সেলিম বিভিন্ন সময়ে লন্ডনে টাকা পাঠিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
কবে এই গাড়ি উপহার দিয়েছিলো সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এই বিষয়ে তদন্ত করছি। পরে সুর্নিদিষ্টভাবে বলতে পারবো। এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
কি পরিমাণ টাকা লন্ডনে পাচার করা হয়েছে জানতে চাইলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, একটা গেটওয়ে থেকে প্রতি মাসে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য আমরা পেয়েছি। এমন আরো কিছু গেটওয়ে আছে; সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি।
তিনি বলেন, অনলাইন ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা ৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার করা হতো। ব্যাংকগুলো মধ্যে হচ্ছে- সিলন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও কমার্শিয়াল ব্যাংক। এই অনলাইন ক্যাসিনো থেকে আয়ের অবৈধ টাকা লন্ডনে পাঠানো হতো।
লন্ডনে তিনি কাকে টাকা পাঠাতেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের অধিনায়ক বলেন, লন্ডনে কোথায় পাঠাতেন; সমীক্ষা করে জানাবো।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক (বিসিবি) লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার সাথে তার কোনো সম্পর্ক পাওয়া গেছে কি-না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, আমরা এমন কিছু পাইনি। তবে, সেলিম অনলাইনে ক্যাসিনো ১ বছর আগে শুরু করেছিলেন।




Discussion about this post