ডেস্ক রিপোর্ট
ক্যাসিনো কি অপরাধ যদি অপরাধ হয় সেটি কোন আইনে? হাইকোর্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে এমন প্রশ্ন তুলেছেন ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম।
তিনি দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ক্যাসিনো খেলা কোনো অপরাধ কি না, হলে কোন আইনে? এসব ক্লাবে যেখানে হাউজি খেলার সুযোগ আছে। সেখানে ক্যাসিনো নতুন আবিষ্কার। ক্যাসিনোও একটা জুয়া খেলা। এটাও একটা গেম।’ এ সময় তিনি এ বিষয়ে আইন থাকলে সেটি আদালতে দেখাতে বলেন।
অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাসিনো যদি আইনে না থাকে, তা হলে এ বিষয়ে আইন করার জন্য দুদক থেকে কি সংসদের কাছে আবেদন করেছেন?’পরে জুয়া, ক্যাসিনো, হাউজির সঙ্গে অর্থপাচারের আইনগত বিষয় জানতে চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি হয়।
আদালতে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারের জামিনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান হাওলাদার ও মুনমুন নাহার। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও শাহীন আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি।

শুনানিতে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আইনে আছে সংঘবদ্ধ অপরাধমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। আমার সাবমিশন হলো- সংঘবদ্ধ অপরাধী দলে অংশগ্রহণ। এখন অংশগ্রহণ করলেই হবে না। তার সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।’
এ সময় আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাসিনো খেলা অবৈধ এটা আইনের কোথায় আছে সেটা আপনি দেখান। গ্যাম্বলিং অ্যাক্টে আছে কিনা সেটা দেখান এবং এর সাজা কী সেটা দেখান।’তখন দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আছে মাইলর্ড, দেখাবো।’ এরপর আবার সাবমিশন শুরু করেন তিনি। পরে আদালত বলেন, ‘এই যে ক্যাসিনো খেলাটা সংঘবদ্ধ অপরাধ সেটা দেখান।’
এ সময় দুদক আইনজীবী বলেন, ‘তখন এটার সাজা পরিমাণ খুবই কম ছিল। পরবর্তীতে এটার সাজা বাড়িয়ে এক মাস কিংবা তার বেশি করেছে। কিন্তু গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট যখন হয়, তখন যে ক্যাসিনো ছিল আর এখন যে ক্যাসিনো আছে, তার মধ্যে বিশাল পার্থক্য। সুতরাং নীতিনির্ধারণী মহল নতুন আইন করতে যাচ্ছেন।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাসিনো খেলা জুয়া খেলা আইনটাই অবৈধ করছে কি-না কিংবা তার সাজা কি? হাউজি এক প্রকার জুয়া, ক্যাসিনো এক প্রকার জুয়া। এ অপরাধের আগে যে সাজা ছিল দুইশ টাকা জরিমানা, দুই মাস সাজা। ওই আইন সংশোধন করা হয়েছে কি-না।’ জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘না।’
আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাসিনো তো এখন মনে হয় বিরাট একটা অপরাধ, মিডিয়া-টিডিয়া সব জায়গায় এটা তো এখন বিরাট অপরাধ। এই অপরাধের জন্য আইনটা সংশোধন হয়েছে কি-না। আপনারা দুদক তো ক্যাসিনো মানে মানি লন্ডারিং, ক্যাসিনোর সঙ্গে আপনারা মানি লন্ডারিং আনতেছেন। আপনারা দুদক থেকে কোনো প্রস্তাব পাঠিয়েছেন আইন সংশোধন চেয়ে? আমি তো একজন সংসদ সদস্য।’
তখন দুদক আইনজীবী খুরশীদ বলেন, ‘গ্যাম্বলিং অ্যাক্টে আছে আমি দেখাবো।’ আদালত বলেন, ‘ওনারা (কামরুল) বলতেছেন, এটা তো এখন অপরাধ না। কাজেই তার বিরুদ্ধে সাজা হবে কেন? দুদক আইনজীবী উত্তরে বলেন, ‘সাজা তো পরের বিষয়। আমরা তো শুনানি করছি মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার)। লন্ডারিং হয়েছে কিনা।
তখন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মানি লন্ডারিং কিভাবে হলো সেটা দেখান। আমি বিদেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা পাঠাই বা টাকা আনি তাহলে সেটা হবে অর্থপাচার। ক্যাসিনো হলেই যে অর্থপাচার সেটা কিভাবে?’
তখন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বেআইনি অর্থ লেনদেন জয় গোপাল করেছে কি-না সেটা দেখান। আপনি দুদকের বড় আইনজীবী। আপনার কাছে আমার বড় কিছু বোঝার আছে। বেআইনি অর্থ লেনদেনে জয় গোপাল টাকার পাহাড় গড়েছে কি-না। কয়টা দোকান, কয়টা বাড়ি, কয়টা ফ্ল্যাট, কত টাকা বিদেশ পাঠিয়েছে তা আছে কিনা সেটা দেখান। ঢাকায় কয়টা আর ঢাকার বাইরে কয়টা বাড়ি আছে?’
দুদক আইনজীবী বলেন, ‘বিদেশে অর্থপাচার করলেই মানি লন্ডারিং হয় না, দেশেও হতে পারে। ক্যাসিনো খেলার জন্য তো অর্থপাচার মামলা হয়নি। অর্থপাচার মামলা হয়েছে বেআইনি স্থানান্তরের জন্য। কিন্তু সোর্সটা হলো ক্যাসিনো।
এ সময় দুদক আইনজীবী বলেন, ‘তার বিষয়ে প্রত্যেকটা জবানবন্দিতে আছে তারা জুয়া খেলার মাধ্যমে করেছে। এটা অর্থপাচার মামলা। আমি যে তিনটা কনফিউশনের কথা বললাম, ফরওয়ার্ডিংয়ের কথা বললাম, ইমপ্লিকেশনের কথা বললাম। এটাতে পরিষ্কার আছে ভাড়া হিসেবে জয় গোপাল দৈনিক ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে।
এ সময় আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দুদকের তদন্তের নামে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা। পিয়ন-চাপরাশিকে এসব মামলায় আসামি করা। আমি তো এটার শাস্তি চাইবো আদালতের কাছে।

আপনারা যে তেলেসমাতি কাণ্ড করেন। যাকে খুশি তাকে হেনস্তা করবেন, যাকে খুশি আসামি করবেন, এটা পরিত্রাণের জন্য আদালতের কাছে চাইবো। ৫০০শ টাকা বেতনে যে চাকরি করে তাকেও আপনারা দুদকের আসামি করবেন।
দুদক আইনজীবী বলেন, ‘এটা সিআইডির বিশেষ একটা টিম গত ২১ জুলাই যে চার্জশিটটা দিয়েছে সেখানে তারা লিখেছেন, দৈনিক ৫০ হাজার টাকা ভাড়া হিসেবে জয় গোপাল তার লোকদের মাধ্যমে গ্রহণ করতো। জয় গোপালের মাধ্যমে এনু ও রূপম ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো খেলার সুযোগ পায়। এটি আপনারা আমলে নেবেন না? অর্থপাচার মানে শুধু বিদেশ না, দেশেও অর্থপাচার হচ্ছে।’
পরে আদালত জুয়া, ক্যাসিনো, হাউজির সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের আইনগত বিষয় জানতে চেয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। ওই দিন দুদকের আইনজীবী এ বিষয়ে আদালতে আইনি ব্যাখ্যা দেবেন।
Discussion about this post