দেশে সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন দেশে সফরকারী তাবলীগ জামাতের লোকজনের গতিবিধি নজরদারিতে রাখবে গোয়েন্দারা। পাশাপাশি তাবলীগের মাধ্যমে যেসব বিদেশি বাংলাদেশে আসে, তারাও নজরদারিতে থাকবে।
সম্প্রতি গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর তাবলীগ জামাতের দেশি-বিদেশিদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দারা। তাবলীগ জামাতের সঙ্গে মিশে যাতে দেশে কেউ জঙ্গিবাদ ছড়াতে না পারে বা জঙ্গিবাদের পথে কাউকে টানতে না পারে, সে লক্ষেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
তাবলীগের সাথি হয়ে দেশের বাইরে যেতে হলে কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে, আগে গিয়েছিল কি না, এসব ব্যাপারে সব তথ্য যাচাইয়ের পর ভিসা দেয়া হবে বলে জানান তারা।
একইভাবে দেশের বাইরে থেকে কে আসতে পারবে আর কে আসতে পারবে না, তা গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশে আসার পর বিদেশিরা কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কী কথা বলছে; সবকিছু কড় নজরদারিতে রাখবে গোয়েন্দারা। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের পর কেউ দেশ থেকে যাচ্ছে কি না, এ ব্যাপারেও সজাগ হচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
গত ১৫ জুলাই সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এম এ আউয়াল তাবলীগে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘তাবলীগে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব বিদেশির চলাফেরা তদারকি করতে হবে।’
তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে দেশে এসে কেউ থেকে যাচ্ছে কি না তা খোঁজ নিতে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনার দাবি করেন আউয়াল।
নজরদারির বিষয়ে তাবলীগের সাথিদের তদারকির দায়িত্বে থাকা রাজশাহীর বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেও কয়েকটি দেশ ঘুরে এসেছি। সেখানে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের দেশেও বিদেশিরা আসবেন, দাওয়াতের কাজ করবেন।’
বিদেশিদের বাংলাদেশে এসে আলাদাভাবে ঘোরা বা কারও সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার সুযোগ নেই চাইলে, সঙ্গে আমাদের লোক থাকে। এমনকি কিছু কিনতে চাইলেও আমরা সঙ্গে যাই। বিদেশিদের দেশে এসে তাবলীগের সঙ্গে মিশে জঙ্গিবাদ প্রচারের সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য দেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসতে চান, তারা প্রথমে কাকরাইলে যোগাযোগ করেন। এরপর সেখান থেকে ভিসা পেতে বিদেশিদের সহায়তা করা হয়। এতে করে তাদের ভিসা পেতে সহজ হয়। ঠিক একইভাবে আমরা যখন অন্য দেশে যাই তখনও তারা আমাদের ভিসা পেতে সাহায্য করে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাবলীগের মজলিশে শূরা ও ফায়সালের সদস্য বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদের একটা প্রিন্সিপল আছে। সেটা দেশের আইন মেনে। আমরা দেশের আইন মেনে চলি। তাবলীগ মানুষকে ভালোর পথে নিয়ে আসে। উন্নত চরিত্রে অধিকারী করে। সেক্ষেত্রে দেশের বাইরে যারা যাবে বা বিদেশি যারা বাংলাদেশে আসবেন, তাদের ওপর সরকার নজরদারিকে পজিটিভলি দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র কাউকে ক্ষতিকর মনে করলে নজরদারি করতে পারে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয়।’
ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘তাবলীগ জামাতের ব্যাপারে আলাদাভাবে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। সন্দেহভাজনদের বিষয়ে আমাদের তৎপরতা আগেও ছিল। এখন সেটা আরও বাড়ানো হয়েছে।’
গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারীরা ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। জিম্মিদের রক্ষা করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও গুলশান থানার ওসি সালাহউদ্দীন নিহত হন।
গুলশান হামলার পর এক সপ্তাহ না যেতেই ৭ জুলাই ঈদের সকালে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের শোলাকিয়া মাঠের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি চালায় জঙ্গিরা। এতে পুলিশের দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হন।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে দুটি ভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলার পর আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা।




Discussion about this post