কস্টোলোর পাঁচ বছরের দ্বায়িত্ব পালনকালে টুইটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে টুইটারকে গণত্রান্ত্রিক সমাজে সকলের মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নাকি শুধু ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে এই নিয়ে কস্টেলো বরাবরই সন্দিহান ছিলেন।
ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের নভেম্বরে টুইটার পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হয়। এর পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা বড় অংকের মুনাফার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। এমনকি ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরাও আশা করতে থাকেন যে, টুইটার অল্প সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য ফেইসবুকের মতই লাভজনক হয়ে উঠবে।
কিন্তু বিগত সময়ে ফেইসবুকের তুলনায় টুইটারের আর্থিক অগ্রগতি খুবই কম বলা চলে। এই সময়ে টুইটারে গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৪.৮৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন মার্কেটে টুইটারের আওতা ৫০০০ কোটি ডলার ছাড়ালেও তা মোট বাজারের মাত্র ১.৬ অংশ। অন্যদিকে একই সময়ে ফেইসবুক দখল করেছে বাজারের ৭.৬ শতাংশ। যুক্ত্রাষ্ট্রের মোবাইল মার্কেটে মোট বিজ্ঞাপনের ৩.৬ অংশ আসে টুইটার থেকে যেখানে ফেইসবুকে এর পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি যা প্রায় ১৮.৫ শতাংশ।
টুইটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারী ক্রিস সাকার-এর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, টুইটার মূলত গ্রাহক চাহিদা হারিয়েছে এবং কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিটের গবেষণায়ও একই তথ্য উঠে এসেছে।
ফেইসবুকের মত টুইটারও বিভিন্ন লাইভ ইভেন্টস, টিভি ট্যালেন্ট শো বা নির্বাচনী বিতর্ক সম্পর্কে জানার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে টুইটার এই ধরনের ইভেন্ট সম্পর্কে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে যার ফলে ব্যবসায়িক দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।
এছাড়া টুইটারের মাধ্যমে নারী এবং সংখ্যালঘুদের উপর অনেকেই আক্রমণাত্বক আচরণ প্রকাশ করেছেন যা নিরসণে টুইটারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে টুইটার ব্যবহার করছেন প্রায় ৩০ কোটি ব্যক্তি যা ফেইসবুকের ১৪৪ কোটি গ্রাহক সংখ্যার চেয়ে নিতান্তই কম।
টুইটার ব্যবহার সহজ এবং সংক্ষিপ্ত হলেও এটি ফেইসবুকের মত সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছোতে পারেনি। মূলত অভিজাত শ্রেণির মানুষরাই টুইটার ব্যবহার করেন। তাছাড়া টুইটারে অ্যাকাউন্ট খোলার পর গ্রাহক ঠিক কাকে ফলো করবেন বা কিভাবে অন্যদের খুঁজে পাবেন এসব নিয়ে অনেককেই সমস্যায় পড়তে হয় যার ফলে গ্রাহকরা টুইটারে সক্রিয় হচ্ছেন না বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
এছাড়া, অনেক সাংবাদিক তাদের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে এক সময় টুইটার ব্যবহার করলেও দিনে দিনে তারা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছেন।
সবমিলিয়ে, টুইটারে বড় ধরনের পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে গ্রাহকদের রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ফেইসবুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না জড়িয়ে টুইটারের নিজস্ব ফিচারগুলোর মান উন্নয়নে মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।
Discussion about this post