ডেস্ক রিপোর্ট
জীবিত থাকার পরও নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের ভুয়া স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সিলগালা করে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে জীবিত থাকার পরও নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এই প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।একই বছরের গত ২৭ আগস্ট জীবিত থাকার পরও নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগের দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বৈধতা ও যৌক্তিকতার প্রশ্নে মামলার সব নথি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই মামলায় তদন্তের সঙ্গে জড়িত দুই তদন্ত কর্মকর্তাকেও তলব করেছিলেন আদালত। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় তারা হাজির হয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে ব্যাখ্যা দেন।

গত ২৪ আগস্ট ‘ধর্ষণের পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া স্কুল ছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদটি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর আদালত আইনজীবীকে লিখিতভাবে হাইকোর্টে আবেদন করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ আগস্ট ওই ঘটনায় রিভিশন আবেদন দাখিল করা হয়।
এরপর গত ২৫ আগস্ট ওই স্কুল ছাত্রী ফিরে আসার ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এই আবেদনটি দাখিল করেন। পাঁচ আইনজীবী হলেন- মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির এবং মো. মিসবাহ উদ্দিন।
রিভিশন আবেদনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা এবং যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়া ওই মামলার নথি তলবেরও আবেদন করা হয়। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মূল মামলার বাদী এবং আসামিদের বিবাদী করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। ৬ আগস্ট তার বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিল নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তিতে তারা বলে যে, তারা মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু ২৩ আগস্ট ওই স্কুলছাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ওই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে, মেয়েটি জীবিত থাকা সত্ত্বেও আসামিরা কীভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সম্পর্কিত স্বীকারোক্তি দিলো।
Discussion about this post