
রাজধানীর ইস্কাটনে এলোপাতাড়ি গুলি করে দুই চালক হত্যা মামলায় বখতিয়ার আলম রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আদালত। আগামী ১১ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
রনির মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে।
রোববার (০৬ মার্চ) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শামসুন্নাহারের আদালত এ অভিযোগ গঠন করেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে ০৬ মার্চ আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
গত বছরের ২১ জুলাই রনিকে আসামি করে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক দীপক কুমার দাশ।
ঘটনার পর গ্রেফতার হওয়া রনির জিপগাড়ির চালক ইমরান ফকিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে চার্জশিটে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় রনির সঙ্গে থাকা তার তিন বন্ধু টাইগার কামাল, জাহাঙ্গীর ও কামাল মাহমুদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হলেও তাদের আসামি করা হয়নি। ইমরান ও রনির ওই তিন বন্ধুকে চার্জশিটে মামলার রাজসাক্ষী করা হয়েছে। তারাসহ ৩৭ জনকে সাক্ষ্য দেবেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে তিন বন্ধুসহ রনি শেলবারে মদ পান করেন। রাত সাড়ে ১১টায় শেলবার বন্ধ হয়ে গেলে তারা হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়ে আরও ৯ হাজার ৫০০ টাকার মদ ও বিয়ার পান করেন। সেখান থেকে রাত দেড়টায় তারা বাসার পথে রওনা দেন।
এমপিপুত্রের প্রাডো গাড়িতে করে তারা একসঙ্গে রওনা হয়ে বাংলামোটর হয়ে মগবাজার যান। সেখানে জাহাঙ্গীরকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার সময় নিউ ইস্কাটন রোডে ট্রপিক্যাল হোমসের নির্মাণাধীন এলএমজি টাওয়ারের সামনে তারা জ্যামে পড়লে রনি তার পিস্তল বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। গুলির শব্দে মুহূর্তে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেলে তারা গাড়ি চালিয়ে চলে যান।
এ সময় রনির ছোঁড়া গুলিতে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সিএনজি চালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আ. হাকিম মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৫ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করেন।
গত বছরের ২৪ মে মামলাটির তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা ও অন্যান্য সোর্সের মাধ্যমে রনির ব্যবহৃত গাড়িটি শনাক্ত করা হয়। গত বছরের ৩১ মে জিপ গাড়িটির চালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান ফকির পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলে রনিকে একই দিন ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে সংসদ সদস্য পিনু খানের বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়িটিও (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬২৩৯) জব্দ করেন গোয়েন্দারা।
গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে তিন দফায় মোট দশদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে রনি তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলির কথা স্বীকার করলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
রনির গাড়ির চালক ইমরান ফকির দু’জনকে হত্যার জন্য রনিকেই দায়ী করে গত বছরের ১ জুন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অন্যদিকে ঘটনার দিন রনির সঙ্গে গাড়িতে থাকা তার বন্ধু টাইগার কামাল ও জাহাঙ্গীর গত ১৮ জুন এবং কামাল মাহমুদ ১৯ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে সাক্ষ্য দেন। তারা তিনজনও সাক্ষ্যে বলেন, রনি তার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ওই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটান।




Discussion about this post