সনদ যাচাইয়ের সুতোয় ঝুলে আছে ২৮৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের চাকরি। দফায় দফায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপারিশ করলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘শিক্ষানবিশ লাইনম্যান’ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন না তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই পদে গত বছরের ডিসেম্বরে কোটা ছাড়া নিয়োগ পাওয়া অন্যরা চাকরিতে যোগদান করেছেন। কিন্তু সনদ যাচাই না হওয়ার কারণে নিয়োগপত্রই পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা।
এদিকে সনদ যাচাই করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন না পাঠালে নিয়োগপত্র দেওয়াও সম্ভব হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
ভুক্তভোগী একাধিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জানান, তাদের অনেকেই এই চাকরির পরীক্ষায় মেধা তালিকায় এগিয়ে আছেন। তারা সাধারণ কোটায় পরীক্ষায় অংশ নিলে আরও ছয় মাস আগে নিয়োগপত্র পেয়ে যেতেন এবং চাকরিতেও যোগদান করতে পারতেন।
এমনই দুই ভুক্তভোগী লক্ষীপুরের আব্দুল কুদ্দুস ও চট্টগ্রামের আরিফুল ইসলাম।
বাংলানিউজকে তারা জানান, মেধা তালিকায় যথাক্রমে ৩৬ ও ৩৭ নম্বরে রয়েছেন এই দুই প্রার্থী। কিন্তু সনদ যাছাই না হওয়ার কারণে নিয়োগ পাচ্ছেন না তারা।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীদের শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে।
পরে যারা সাধারণ মেধাতালিকায় ছিলেন তাদের সরাসরি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের নিয়োগ কার্ড না দিয়ে শুধু পোস্টিং কার্ড দেওয়া হয়েছে।
তাদের নিয়োগপত্র দিতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই হয়ে আসতে হবে। এসব সনদ যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে গত ২১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
কিন্তু এই চিঠি পাওয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের নিয়োগের সংশ্লিষ্ট সনদ যাচাই-বাছাই করেনি।
এসব সনদ যাচাই-বাছাই করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠাতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এবং ৩০ মার্চ দুই দফা সুপারিশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১৮ এপ্রিল দুই দফা সুপারিশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু সনদ যাচাই-বাছাই করা হয়নি গত চার মাসেও।
ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, নিয়োগপত্র না পাওয়াতে দিনের পর দিন দুইজন-চারজন করে মন্ত্রণালয়ে আসি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন হবে, হচ্ছে।
‘আমি মেধা তালিকায় ৩৭ নম্বরে, যদি কোটা উল্লেখ না করা হতো, তাহলে ‘সাধারণ কোটা’তে অন্যান্যদের সঙ্গে ডিসেম্বরেই তিনি নিয়োগপত্র পেয়ে চাকরিতে যোগদান করতে পারতাম,’ বলেন আরেক প্রার্থী আরেক প্রার্থী আরিফুল ইসলাম।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের উপ-সচিব মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ‘শিক্ষানবিশ লাইনম্যান’ পদে ২৮৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের নিয়োগের জন্য তাদের পিতা/মাতা/পিতামহ/মাতামহের মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু তারা সেইসব সনদ যাচাই করে কোন প্রতিবেদন পাঠায়নি।
‘মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের এসব সনদ যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠালে এর ভিত্তিতে যোগ্যদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। যাচাই-বাছাইয়ের প্রতিবেদন ছাড়া নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিবেদন পাঠাতে দেরি হলে নিয়োগ দিতেও দেরি হবে।’




Discussion about this post