ডেস্ক রিপোর্ট
কানাডায় পলাতক পিকে হালদারের বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে আদেশ দেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই পরামর্শ দেন। আদালতে আজ দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠা প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে) এখন কানাডায় আয়েশি জীবন-যাপন করছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনে সরাসরি টকশোতে অংশ নেন। পলাতক এই আসামির সঙ্গে টকশোতে অংশগ্রহণ করার জন্য দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খানকেও ডাকে ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন দুদক আইনজীবী। পরে পলাতক আসামির বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে আদেশ দেয়ার জন্য দুদককে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।

এ প্রসঙ্গে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পিকে হালদারের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা কতটুকু আইনসঙ্গত তা জানতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আনেন দুদকের আইনজীবী। এরপর দুদকের আইনজীবী এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমিও শুনানিতে অংশগ্রহণ করি। এ সময় শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘পলাতক আসামি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে পারে না।পরে আদালত বলেন, ‘আমরা তো স্বপ্রণোদিত হয়ে পিকে হালদারের বিষয়ে অনেক আদেশ দিয়েছি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্যও বলেছি।এরপর পলাতক আসামি হিসেবে তার বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচারের বিষয়ে আদেশের জন্য দুদককে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে আবেদন করার পর সেটির ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তারপর আদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।এ সময় তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে হাইকোর্টের অপর বেঞ্চে দেয়া নিষেধাজ্ঞার উদাহরণ তুলে ধরে যুক্তি উপস্থাপন করেন দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।এর আগে গত ১৮ নভেম্বর ‘পিকে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে পরদিন গত (১৯ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
এর সঙ্গে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ও গ্রেফতারে পদক্ষেপ বিষয়ে লিখিতভাবে দুদক চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের জানাতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় ৯ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার তদন্ত ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানোর অগ্রগতি জানতে নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতে ৩ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে।
ওইদিন পিকে হালদারের বিষয়ে হাইকোর্টের স্বপ্রণোদিত রুল জারির পর অনেক ভুক্তভোগী এসে দেখা করে তার সঙ্গে কথা বলেন বলে জানান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি জানান, পিকে হালদার অবিবাহিত। তার অনেক বান্ধবী থাকার তথ্য ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পিকে হালদারের যেসব বান্ধবীর অ্যাকাউন্টে পাচারের টাকা রয়েছে সেই তথ্য যদি সঠিক ও প্রমাণিত হয় তাহলে তারাও আসামি হবেন। ইতোমধ্যে দুদকের প্রকাশিত এমন তথ্যে আতঙ্কে রয়েছেন সেই গার্লফ্রেন্ডদের অনেকেই। ধার্য তারিখ ৩ জানুয়ারি আদালতকে অগ্রগতি জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, রিলায়েন্স ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এসব অর্থ নিয়ে তিনি পাড়ি জমান কানাডায়। পরে অক্টোবর মাসে দেশে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু হাইকোর্ট নির্দেশ দেন দেশে ফিরলে যেন তাকে বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয়। দেশের উচ্চ আদালত থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি এমন আদেশ দেয়ার পর তিনি দুবাই থেকে আবারও কানাডায় ফিরে যান।

এদিকে পিকে হালদারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা অর্থ আমানত হিসাবে রেখেছিলেন তারা এখন বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে দুদককে সহযোগিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঊর্ধ্বতন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এরা পিকে হালদার পাচারকৃত টাকা কোথায় কোথায় রেখেছেন, তারা তা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে জেনে দুদককে অবহিত করছেন বলেও দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন।
দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের আরও বলেন, পিকে হালদারের অ্যাকাউন্ট থেকে তার একাধিক গার্লফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর প্রাথমিক তথ্য এসেছে। পিকে হালদারের কারণে দেউলিয়া হতে বসা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগীদের অনেকেই এসে আমাকে এসব তথ্য দিয়েছেন। এখন এ বিষয়ে তদন্ত হলে যদি গার্লফ্রেন্ডদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে তারাও আসামি হবেন।
Discussion about this post