বিডি ল নিউজঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামালায় মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেনের অপরাধের তদন্ত কর্মকর্তা অথর্ব তথা অযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আজ বুধবার (২০ মে ) এ মামলার রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এ মন্তব্য করেন।
রায় ঘোষণার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ মামলার দুই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগটি ছিল দালাল আইনে মামলা। কিন্তু আসামিদের বিরুদ্ধে আগেই দালাল আইনি মামলা হয় এবং তাঁদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বিষয়টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় ধরা পড়ে।
একই অভিযোগে দ্বিতীয়বার অভিযুক্ত করায় এটিকে রাষ্ট্রপক্ষ মামলা থেকে বাদ দেয়। ট্রাইব্যুনাল মনে করে তদন্ত কর্মকর্তার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার জন্য এমনটা ঘটেছে। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি অযোগ্য।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন আলতাফুর রহমান বিদেশে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগের দুটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অধিকাংশ বিচারকের রায়ে ২ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ১৯৭২ সালের দালাল আইনে তিন নম্বর অভিযোগে তাদের দণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। তারা শাস্তিও ভোগ করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন না করে অভিযোগ গঠন করে তদন্ত কর্মকর্তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য তাদের ৩ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলো। এসময় ব্যর্থতার পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তাদের অথর্বও বলেছেন ট্রাইব্যুনাল।
একই বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার বলেন, ‘দালাল আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়, তার বিরুদ্ধে যদি হাইকোর্টে আপিল করা না হতো, তাহলে ওই রায়ের কোনো রেকর্ডই পেতাম না। তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সব নথি লুকিয়ে ফেলেছেন। আমরা সাক্ষীদের জেরা করার সময় তদন্ত কর্মকর্তার কারসাজির বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেছি। এ কারণে বাকি দুটি অভিযোগের বিষয়েও সন্দেহ থেকে যায়।’
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি এ মামলায় নিযুক্ত প্রসিকিউটরও ভুল করেছেন। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি প্রসিকিউটরও দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘একজন প্রসিকিউটর যুদ্ধাপরাধ মামলার ক্ষেত্রে নিজেই তদন্ত করতে পারেন। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৭ (ক) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি একটি ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত হন, তবে তাকে অন্য ইস্যুতেও মামলার মুখোমুখি করা যাবে।
’৭২-এ তাদের বিরুদ্ধে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল হত্যা মামলা। কিন্তু ’৭১ সালে তারা আসলে গণহত্যা করেছিল। এ গণহত্যার অভিযোগে তাদের বিচারের বিষয়টি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি, যে কারণে আজ আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যর্থ বলে তিরস্কার করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুলমাঠে ও এর আশপাশে সংগঠিত গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করা হয়। গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মাহিদুর রহমান ও বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামের আফসার হোসেন চুটুকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।”লেটেস্টবিডিনিউজ




Discussion about this post