বিডি ল নিউজঃ

ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে তিন স্কুলছাত্রীর যুক্তরাজ্য ত্যাগের ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ। সমালোচকেরা বলছেন, দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট উগ্রবাদ দমনে মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে এক ছাত্রী তার বড় বোনের পাসপোর্ট ব্যবহার করে এয়ারপোর্ট পাড়ি দিয়েছে, এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের বেথনল গ্রিন একাডেমির তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে শামিমা বেগম (১৫) ও খাদিজা সুলতানা (১৬) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। অপর কিশোরী ১৫ বছর বয়সী আমিরা আবাসি ইথিওপিয়ান বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবারই তিন ছাত্রী গ্যাটউইক এয়ারপোর্ট থেকে তুরস্কের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। পুলিশের ধারণা, সিরিয়ার আইএসে যোগ দিতে তারা তুরস্কে গিয়েছে। সিরিয়া গমনের জন্য তুরস্ক একটি অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত।
আজ সোমবার নিখোঁজের সাত দিন পার হলেও এসব কিশোরীর হদিস মেলেনি। সর্বশেষ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ পুলিশের কিছু কর্মকর্তা নিখোঁজ ছাত্রীদের খোঁজে তুরস্কে গেছেন। পুলিশের ধারণা, তুষারপাতের কারণে তুরস্কে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে হয়তো তিন কিশোরীর পক্ষে এখনো সিরিয়ায় যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে তিন স্কুলছাত্রী সম্পর্কে পুলিশের প্রকাশিত নতুন নতুন তথ্য যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি দিয়েছে। পুলিশ জানায়, গত ডিসেম্বরে এই তিন স্কুলছাত্রীর আরেক সহপাঠী সিরিয়ায় যায়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাস দমন পুলিশ এই তিন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। অন্যদিকে ২০১৩ সালে স্কটল্যান্ড থেকে সিরিয়ায় গমন করা আকসা মাহমুদ নামের অপর এক তরুণীর সঙ্গে এই তিন শিক্ষার্থীর যোগাযোগ ছিল। নিখোঁজ হওয়ার আগের রোববার শামিমা বেগম টুইটারে আকসা মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসব ঘটনা পুলিশ আগে থেকে কিশোরীদের পরিবারকে জানায়নি। পরিবারের অভিযোগ, এসব ঘটনা আগে থেকে জানলে তাঁরা সন্তানদের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নিতে পারতেন। অন্যদিকে ১৫ বছর বয়সী শামিমা বেগম বড় বোনের পাসপোর্ট বহন করছিল বলে আজ নিশ্চিত করে ব্রিটিশ পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ে অন্যের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কীভাবে ফ্লাইটে উঠতে সক্ষম হলো।
আকসা মাহমুদের পারিবারিক আইনজীবী আমির আনোয়ার বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, সিরিয়া পাড়ি দেওয়ার পর থেকেই আকসা মাহমুদের সামাজিক যোগাযোগ অ্যাকাউন্টগুলো পুলিশ নিয়মিত নজরদারি করে আসছে। আকসার সঙ্গে এই তিন স্কুলছাত্রীর যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চয় পুলিশ আগে থেকে জানত। গত ডিসেম্বরে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে এই কিশোরীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁর প্রশ্ন, পুলিশ ওই তিন কিশোরীর পরিবারকে এই সন্দেহের বিষয়টি জানায়নি কেন?
এই আইনজীবী আরও বলেন, এটা সাধারণ বিবেচনার বিষয় যে, অপ্রাপ্তবয়স্ক তিন স্কুলপড়ুয়া মেয়ে কেন তুরস্কে যাবে। কেন তাদের বিনা বাধায় ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হলো। পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ ও ফ্লাইট অপারেটর সবাই তিন কিশোরীকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সমালোচনার জবাবে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তারা মন্তব্য করে না।




Discussion about this post