বিডিলনিউজঃ লোমহর্ষক ঘটনা তাও আবার ৬ বছর বয়সী শ্যালিকা আর দুলাভাইয়ের মধ্যে। দুলাভাই শাকিল কিছুদিন আগে শাশুড়ির থেকে টাকা চায়। শাশুড়ি টাকা না দিয়ে উল্টো লোকজনের সামনে শাকিলকে অপমান করেন। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই শ্যালিকা সোনিয়াকে ধর্ষণের পর খুন করে শাকিল। তারপর শ্যালিকার বস্তাভর্তি লাশ নিয়ে নগরের অলিগলিতে প্রায় তিন ঘণ্টা ঘুরে বেড়ায় খুনি দুলাভাই। পরে জুমার নামাজের সময় এলাকায় লোকজনের চলাচল কমে যাওয়ার সুযোগে সে একটি স্থানে লাশ ফেলে দেয়। নৃশংস এই খুনের ঘটনার পর একটি বোতামের সূত্র ধরে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে বুধবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা করে খুনি দুলাভাই মো. শাকিল। গত ১৩ ডিসেম্বর এই খুনের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মো. শাকিল (১৯) কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেশেরা গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে। আর নিহত সোনিয়া (৬) শাকিলের স্ত্রী রুনার ছোট বোন। শাকিল ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হালিশহর থানার রঙ্গিপাড়া ব্যাংক কলোনির হাশেম জমিদারের ভাড়া ঘরে পাশাপাশি থাকে।
খুনের ঘটনার পর শাকিল ঢাকায় পালিয়ে যায়। পরে বাসায় আসে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল খুনের দায় স্বীকার করে। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাকে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম লুৎফুল মজীদ নয়নের আদালতে আসামি মো. শাকিল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে জানিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আসামি জবানবন্দিতে খুনের আদ্যোপান্ত স্বীকার করেছে।
খুনের বর্ণনা দিয়ে শাকিল আদালতকে জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর গার্মেন্ট বন্ধ থাকায় শাকিল স্ত্রীসহ নিজের বাসায় ছিল। তার শ্বশুর রিকশা চালানো এবং শাশুড়ি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজে এবং শ্যালক একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজের জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাসায় ছিল শুধু ছয় বছরের সোনিয়া। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় স্ত্রী রুনা মায়ের বাসায় টেলিভিশন দেখছিল। এ সময় সোনিয়াকে বিস্কুট ও জুস খেতে দিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে যায় শাকিল। পরে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সোনিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়লে নাইলনের রশি সোনিয়ার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। হত্যার পর বস্তায় লাশ ভরে সে বাসা থেকে বেরিয়ে রঙ্গিপাড়া মাছবাজারে যায়। জুমার নামাজের সময় সুযোগ বুঝে সে বস্তা থেকে লাশ বের করে ফেলে দেয়।
একটি বোতামের সূত্র ধরেই আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘সোনিয়াকে না পেয়ে তার পরিবার প্রথমে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। এই ডায়রির তদন্তের শুরুতে শাকিলের ঘরে পুলিশ তল্লাশি করতে যায় এবং সেখান থেকে একটি বোতাম (যার গায়ে ইংরেজিতে LCW TEEN 0089-2 লেখা) জব্দ করে।’ তিনি বলেন, ‘খুনের ঘটনার দুই দিন পর ১৫ ডিসেম্বর পুলিশ সোনিয়ার লাশ উদ্ধার করে। এ ছাড়া পালিয়ে যাওয়া শাকিল যখন ফিরে আসে, তখন থানার পুলিশ শাকিলের প্যান্টের দিকে নজর দেয় এবং দেখে একই লেখাযুক্ত বোতাম শাকিলের প্যান্টেও আছে এবং প্যান্টের একটি বোতাম নেই। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এতেই ঘটনার আসল তথ্য বেরিয়ে আসে।’
Discussion about this post