রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৮ সালে। সে অনুসারে কাজও এগিয়ে চলছে। কিন্তু মাঝপথে এসে পূর্বের নকশা পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ সুযোগে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে ২৫০ শতাংশ। আর বাস্তবায়নের মেয়াদকাল বাড়ানো হচ্ছে আরো দেড় বছর। নতুন নকশা অনুযায়ী ভবনটির ভিত্তি ২০ তলার পরিবর্তে ৩০ তলা করা হবে। এ সংক্রান্ত চলমান প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব এখন পরিকল্পনা কমিশনে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, মূল প্রকল্পে ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা বেইজমেন্ট করার কথা ছিল। কিন্তু সে অনুসারে কাজ না করে আগেই ৩০ তলা ভিত্তির ওপর কাজ শুরু করে এনবিআর, যা বিদ্যমান শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এছাড়া আগারগাঁও এলাকায় ১৫০ ফুটের অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট ভবন বা টাওয়ার নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এনবিআর এ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। কাজও এগিয়ে চলছে। গত জুন পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন নিয়ম রক্ষায় প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও স্বচ্ছ করতে এক ছাদের নিচে কাজ করতে চায় এনবিআর। সে লক্ষ্য সামনে রেখে ২০০৯ সালে নিজস্ব ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে ২০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ভবনের তলা আরো বাড়ানোর কথা বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অদূর ভবিষ্যতে শেরেবাংলা নগর এলাকায় বেসামরিক বিমানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। বৈঠকে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ এটি আমাদের জানিয়েছে। এখন ১২ তলা পর্যন্ত করা হবে। আগামী ৫০ বছরের কথা মাথায় রেখে এটি ৩০ তলা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা যায়, নতুন প্রস্তাবনায় ব্যয় বাড়িয়ে ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা করা হয়েছে। এ হিসেবে বিদ্যমান প্রকল্প ব্যয়ের চেয়ে ৩৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বাড়ছে। শতকরা হিসেবে যা ২৫০ শতাংশ। একই সঙ্গে মেয়াদ বাড়ছে দেড় বছর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদনকালে এ ভবনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পের ভবন নির্মাণসহ দরপত্র কাজের জন্য ১১৪ কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা সংস্থান রাখা হয়। ২০০৯ সালে এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ওইসময় এ ভবনের কাজ শেষ করার জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়, ফাউন্ডেশনের ঢালাইয়ের থিকনেস ৬০ ইঞ্চির পরিবর্তে ৮০ ইঞ্চি করা হয়। ফ্লোর এরিয়া ৪০ হাজার বর্গফুটের স্থলে ৬৬ হাজার বর্গফুট। এছাড়া আনুষঙ্গিক আইটেম মূল দরপত্রের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি দরপত্রের বাইরে কিছু আইটেম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে একশ বছরের পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের এডিপির আকার প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে জাতীয় রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংক্রান্ত যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব মহল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে বলে তিনি আশা করেন।




Discussion about this post