নিজস্ব প্রতিবেদক: পাওয়ার কয়েন, ম্যাগনেটিক পিলার, তক্ষক, ভাঙা জাহাজের লোহা, বিদেশি কাপড় দেশে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীতে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় এক বা একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। বুধবার বিকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর কাফরুলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।
গ্রেফতার প্রতারকরা হলো— নুরুল ইসলাম, মিনার মিয়া, মিজান, তোফাজ্জল করিম তানভির, আক্তার ফারুক, মো. রাজু, গোলাম মোস্তফা শাকিল, মো. শাকিল খান, জাহাঙ্গীরুল আবেদীন, আজগর আলী হাওলাদার, সিরাজুল ইসলাম, শামীম মিয়া, অজয় চাকী, হারুন উর রশিদ ও তুষার আহমেদ। এই প্রতারকদের টার্গেট স্বচ্ছল ব্যবসায়ীরা।
র্যাব কর্মকর্তা চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, প্রতারকরা টার্গেট করে ধনী ব্যবসায়ীদের। এরপর বিভিন্ন ধরনের ধাতব পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখায়। টার্গেটেড ব্যক্তিকে কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ দিয়ে ফের তা বিদেশে বেশি দামে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে।
তিনি জানান, প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ম্যাগনেটিক কয়েন ব্যবহার করে। এই কয়েনের কার্যকারিতা দেখানোর জন্য ধানের মধ্যে সুঁইয়ের মাথা লুকিয়ে রাখে। কয়েনটি কাছে নিয়ে আসলে ধান ম্যাগনেটের প্রভাবে আকর্ষিত হয়। এটা দেখিয়ে কয়েনগুলো অনেক মূল্যবান বলে তা বিক্রির প্রলোভন দেওয়া হয়। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কেউ ওই কয়েন কিনতে চাইলে কোটি টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করতো। অগ্রিম হিসেবে ক্রেতার কাছ থেকে তারা ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে নিতো। এরপর সেগুলো বিদেশে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলতো প্রতারকরা। কয়েন কেনার পর টার্গেটেড ব্যক্তিকে না চেনার ভান করতো প্রতারকরা এবং বাড়াবাড়ি করলে হুমকি দিতো তারা।
র্যাব কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, একইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে শাটিং ফেব্রিক্স, জাহাজ ভাঙা লোহা, ম্যাগনেটিক পিলারসহ তক্ষকও বিক্রি করতো এই চক্রটি। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই চক্রের সদস্যরা দুই শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
প্রতারকদের তক্ষক বিক্রির কৌশল সম্পর্কে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ‘প্রতারক চক্রের এজেন্টরা ভিকটিমদের জানায় যে, যদি ১৫ ইঞ্চির বড় এবং তক্ষকের ওজন কমপক্ষে ২৫৩ গ্রাম হয়, তাহলে ওই তক্ষকের মূল্য ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা। প্রতারকচক্রের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিদেরকে কম দামে তক্ষক কিনে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের লোভনীয় অফার দেয়। ভিকটিম যখন তক্ষক কেনার জন্য রাজি হন, তখন প্রতারকচক্রের সদস্যরা কৌশলে ছোট ভিডিও’র মাধ্যমে তক্ষক দেখায় এবং ভিকটিমের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার কখনও কখনও ভিকটিম তক্ষক কেনার পর প্রতরকচক্রের সদস্যদের মধ্যে কেউ একজন তক্ষক বিশষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দেয় এবং ভিকটিমের কেনা তক্ষকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায়, এই তক্ষক বিদেশে বিক্রির উপযুক্ত নয়। আবার যদি তক্ষকটি সঠিক মাপের ও ওজনের হয়, তখন প্রতারকচক্রের সদস্যরা সু-কৌশলে তক্ষকটি মেরে ফেলে।




Discussion about this post