মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনায় জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকায় নিজামীর রিভিউ আবেদনটি ১ নম্বরে ছিল।
এটি ছিল যুদ্ধাপরাধী নিজামীর শেষ আইনি সুযোগ। আবেদনটি খারিজ হওয়ায় তার সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ রইল।
নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যায় না। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য তিন বিচারপতি হলেন— বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২৩ মিনিট থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রিভিউ শুনানির পর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ রায়ের এই দিন ঠিক করে দেন।
এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
এরপর যুদ্ধাপরাধের দায়ে গতবছর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গত ২৯ মার্চ সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিজামীর আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন জমা দেন। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে দণ্ড থেকে আসামির খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাউন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়।
৩০ মার্চ রিভিউ আবেদনটির দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিনই এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত।
গত ১৫ মার্চ নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতির সইয়ের পর এ রায় প্রকাশ করেন।
গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিনটি অপরাধের দায়ে দোষী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যনালের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় ঘোষণা করা হয়।
বুদ্ধিজীবী নিধনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
Discussion about this post