ফেনী প্রতিনিধি: ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার বাদী তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা শুরু করেছেন আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা।
আজ রবিবার (৩০ জুন ) সকাল সাড়ে ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তার জেরা শুরু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের কৌঁসুলি এম শাহজাহান সাজু বলেন, আজ মামলার বাদী নোমানকে জেরা শেষ হবে বলে আশা করছি। একই সঙ্গে নুসরাতের দুই সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ হতে পারে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এই মামলার বাদীর সাক্ষ্য শেষে ১৬ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাহসহ ৯ আসামির আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা জেরা করেছেন।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১১টায় আসামি কামরুন নাহার মনি প্রকাশ ও উম্মে সুলতানা পপির পক্ষে কৌঁসুলি আহসান কবির বেঙ্গল ও নুরুল ইসলাম মামলার বাদী নোমানকে প্রথমে জেরা শুরু করেন। তাদের জেরা শেষ হলে আরও পাঁচ আাসমি পক্ষের কৌঁসুলিরা বাদীকে জেরা করতে আদালতে হাজির রয়েছেন।
কোর্ট ইন্সপেক্টর গোলাম জিলানী বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাহসহ অভিযুক্ত ১৬ জন কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আনা হয়।
আদালত সূএ জানায়, এর আগে গত ২৮ মে ফেনীর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম প্রধান আসামি সিরাজ উদ্দৌলাহসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর গত ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি না করে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।
১০ জুন মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আট জনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই এই মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা তুলে না নেওয়ার কারণে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নুসরাতকে।
এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।




Discussion about this post