বিডি ল নিউজঃ ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপির কোর্টে বল ঠেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ডিসিসি নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল করাই ‘টার্গেট’ ২০ দলীয় জোটের। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে এমনটাই জানান তারা।
নতুন নির্বাচনের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধের সঙ্গে দফায় দফায় হরতাল পালন করছে ২০ দলীয় জোট। এর আগে ঢাকার বাইরে ৫টি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবির পর ‘অদৃশ্য’ কারণে থেমে যায় ডিসিসি নির্বাচন।
১৬ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই আবারও ডিসিসি নির্বাচনের ইঙ্গিত দেন শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এমনটাই ইঙ্গিত করে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বরও দুই ডিসিসি নির্বাচনের আয়োজন করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
ডিসিসি নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস টেলিফোনে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ভাবার সময় নেই।’
ডিসিসি নির্বাচনের তারিখ ষোষণা হলে তাতে বিএনপি অংশ নিবে কিনা এমন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সময় হলে দেখা যাবে। এ বিষয়ে বিএনপি সময়মতোই পদক্ষেপ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ডিসিসি নির্বাচনের কথা সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা ষড়যন্ত্র, অবশ্যই ষড়যন্ত্র।’
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র বিএনপির আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে। শিগগিরই এ আন্দোলন সফলতার মুখ দেখবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান মোবাইল ফোনে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হঠাৎ ডিসিসি নির্বাচন সরকারের কৌশল হতে পারে। জনগণ এই মুহূর্তে ডিসিসি নির্বাচন চায় বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা কেবলমাত্র নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। যার ফলে গণতন্ত্র রক্ষা হয়নি। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আরেকটি নির্বাচন দিতে হবে। এর জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জেনারেল মাহবুব বলেন, ‘বিএনপির মূল লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এ দাবিতে আন্দোলন চলছে, অবরোধ অব্যাহত আছে। যতদিন সফল না হব ততদিন আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অবস্থানকারী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান মঙ্গলবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার এখন বিএনপির আন্দোলন ইস্যুকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য ডিসিসি নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তবে জনগণ তা সফল হতে দেবে না।’
সেলিমা রহমান বলেন, ‘সকল নির্বাচনেই জনগণের একটা আগ্রহ থাকে। সেই সুযোগটাই সরকার নেওয়ার চেষ্টা করেছ।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতারা আন্দোলনে থাকায় তারা সরকারের দমন-পীড়নের কারণে প্রকাশ্যে নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন ক্ষমতাসীনরা।’
ডিসিসি নির্বাচন সম্পর্কে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বিষয় জানাতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন অবগত আছেন। এখনো তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পরিস্থিতি বুঝে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে। এখন জাতীয় নির্বাচন দিয়ে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
২০০৭ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঢাকা সিটিতে নির্বাচন করতে পারেনি। ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর সরকার ঢাকা সিটিকে দুই ভাগে ভাগ করে। এর পর সীমানা জটিলতার কারণ দেখিয়ে ইসি এতদিন নির্বাচন করেনি। ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। এর পর থেকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য রিপোর্ট




Discussion about this post