ডেস্ক রিপোর্ট
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের নয় বছরের শিশু ফাতিমা আক্তারকে (ইতি) ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
খালাস প্রাপ্ত দুজন হলেন নিহত ফাতিমার মামাতো ভাই উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান ওরফে স্বপন (২২) ও একই গ্রামের সুমন জমাদ্দার (২০)।
আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বুধবার (৩০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই রায় দেন।আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর, ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানি নিয়ে আদালত আজ এই রায় দেন।২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে। সে একই উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়ায় নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বিদ্যালয়ের মাঠে যায় ফাতেমা। দুপুরেও ঘরে না ফেরায় স্বজনরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে তার উলঙ্গ ও ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তদন্তে দেখা যায়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় ফাতেমার মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান। পরে মেহেদী ও তার সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি ও মেহেদী মেয়েটিকে বাগডাসা দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করেন।
রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ফাতেমার বড় বোন বিথিকে ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মেহেদী। বিথির পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে স্বজনরা মেহেদীকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও বিথির প্রতি আকর্ষণ না কমায় স্ত্রীর ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতেন তিনি।
একই বাড়িতে থাকায় ফাতেমা তাতে বাধা দিতো। এনিয়ে ফাতেমার ওপর রাগ ছিল তার। একপর্যায়ে মেহেদী তার বন্ধু সুমনকে নিয়ে ফন্দি আঁটেন যে ফাতেমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করলে স্বজনরা এনিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সে সুযোগে বিথিকে অপহরণ করে পালিয়ে যাবেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।
মামলায় ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন আদালত।ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার ননী গোপাল রায় তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ইতিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে ইতির বাবা ফুল মিয়া ৬ অক্টোবর একটি মামলা করেন।
এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি এ দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরবর্তীতে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন।রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিদ্বয় ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
Discussion about this post