ডেস্ক রিপোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর উপলব্ধি ছিল দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি।’ শনিবার (১০ এপ্রিল) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সংবিধান, আদালত এবং মুক্তিযুদ্ধে নারী ও শিশুকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। তিনি আমাদেরকে কতবার বলেছেন। আমাদের দেশের দুর্নীতি কি কমেছে?’
এই বিচারপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিচার বিভাগকে নতুনভাবে গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। জুডিশিয়াল পদ্ধতি ও কাঠামো পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই পরিবর্তন কি হয়েছে? আজকাল টেলিফোনও বাজার দরকার হয় না। শুধু বলতে হয় অমুক স্যার এটাতে সম্পৃক্ত আছেন।’
ভার্চুয়ালি মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, লেখক, গবেষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ শীর্ষক গ্রন্থটি লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু সংবিধান আইন আদালত ও অন্যান্য’ শীর্ষক বইটি লিখেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।
আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেখানে বলেছেন ‘মার্শাল ল’ যখন চলছিল তখনো বিচার পেয়েছিলাম। আজকাল জামিনের কথা উঠলেই টেলিফোন বেজে ওঠে। আজকাল টেলিফোন বাজারও দরকার হয় না। শুধু শুনলে হয় অমুক স্যার এটাতে সম্পৃক্ত আছেন।
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘লেখক হিসেবে এম. ইনায়েতুর রহিমকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নতুন দেশ। জুডিশিয়াল সিস্টেমে পরিবর্তন করা দরকার। কিন্তু সেই পরিবর্তন কি এসেছে? পরিবর্তন নিশ্চয়ই এসেছে। কিন্তু কতটুকু ভালোর দিকে আমরা যেতে পেরেছি। আমাদের চার মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৪০ লাখ অনিষ্পন্ন মামলা।’
বঙ্গবন্ধুর তখনকার উদ্ধৃতি দিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ এই বিচারপতি বলেন, ‘ইংরেজ আমলের বিচারব্যবস্থা পরিবর্তন করে এক বছর, দেড় বছরের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু আমরা এখন যে মামলা শেষ করি সেগুলো ১৫ বছর, ১০ বছর এবং ২০ বছরের নিচে তো নয়ই। বঙ্গবন্ধু যে সিস্টেম পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, সেই সিস্টেম আমরা আজও পরিবর্তন করতে পারিনি। কিন্তু এটি এখনই করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দ্রুত বিচারের জন্য নতুন কাঠামো তৈরির কথা বলেছিলেন। সেই কাঠামো কি আমরা তৈরি করতে পেরেছি? আমি বলব যে, না পারি নাই।’
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘২০০৩ সালে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর চালু হয়েছিল। এর কতটুকু আমরা ব্যবহার করেছি? পারিনি। ২০১২ সালে মেডিয়েশন (মধ্যস্থতা) বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। মধ্যস্থতার মধ্যে বিচার হলে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো আক্রোশ থাকে না। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্তে এলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল, রিভিশন করতে হয় না। মামলাজট এমনিতেই কমে যায়। কিন্তু সেই ব্যবস্থা আমরা আজ পর্যন্ত ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারিনি। ’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক আক্ষেপ করে বলেছিলেন, পাকিস্তানিরা আমাদের সব নিয়ে গেল। এই চোরগুলোকে নিয়ে গেলে ভালো হতো। দুর্নীতি এখনো দেশের প্রতিটি জায়গায় বিদ্যমান।’ বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘আমি দুঃখিত আপনাদের কাছে এসব কথা বলার জন্য। কিন্তু আমাদেরকেই এসব পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবর্তন যদি করতেই হয় আর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা যদি গড়তেই হয়, আমাদেরকেই গড়তে হবে। আমি দুজন লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের এই লেখনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও বিচারাঙ্গন নিয়ে তরুণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দুই বিচারপতির লেখা বই দুটি নিয়ে অন্যদরে মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, লেখক-প্রকাশক ও গবেষক মফিদুল হক, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, সাহিত্যিক আনিসুল হক ও বই দুটির প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোকসানা পারভীন কবিতা।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে কথা বলেন লেখক দুই বিচারপতি। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি ইকবাল কবির, বিচারপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বিচারপতি একেএম জহিরুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিকরা যুক্ত ছিলেন।
বই দুটি বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্সের স্টলে এবং অনলাইনে পাওয়া যাবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে থাকা বুক কর্নারেও বই দুটি পাওয়া যাবে।
Discussion about this post