বিডি ল নিউজঃ

পুলিশি বিধিনিষেধ বা চলাচলে কোনো বাধা না থাকলেও গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় ছাড়ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবরোধ যতদিন চলবে ততদিনই তিনি সেখানে থাকবেন। এমনকি নিজের বাড়িতেও ফিরবেন না। বেগম জিয়া এ কারণে স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গতকাল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে তার মাজারেও যাননি। দলের সিনিয়র নেতাদেরও শেরেবাংলা নগরে জিয়ার মাজারে দেখা যায়নি। চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে বিকালে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে পাঠান খালেদা জিয়া। তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে চলমান কর্মসূচি ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এখনই কার্যালয় ত্যাগ না করার বিষয়টি স্পষ্ট করেন। বলেন, ‘এটা আমার অফিস। এখানে আমার অনেক কাজ আছে। আমি এখানে কাজ করব। আমার যখন যেখানে যেতে ইচ্ছা করবে, সেখানে যদি বিনা বাধায় যেতে পারি তাহলেই বুঝব আমার ওপর অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে।’ খালেদা জিয়া এ সময় সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চলবে বলেও জানান। পাশাপাশি কার্যালয় থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করায় সরকারকে ধন্যবাদ দেন। ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, গোয়েন্দাদের পরামর্শ অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয় গোয়েন্দাদের পরামর্শমতেই। প্রয়োজন হলে আবারও তার নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। টানা ১৫ দিন ‘অবরুদ্ধ’ থাকার পর গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ প্রত্যাহার করা হয় রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে। ঢাকার অভিজাত এই এলাকার ৮৬ নম্বর সড়ক থেকে পুলিশের জলকামানের গাড়ি ও দুটি ভ্যান সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় বাড়তি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এরপর গুলশান-২-এর ওই সড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি-প্রধান। তার প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ‘রবিবার রাত আড়াইটার পর হঠাৎ করেই পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশও দেখা যায়নি।’ পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বিধিনিষেধ নেই বলা হলেও খালেদা জিয়া গতকাল দিনভর বের হননি। নিয়মিত পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কার্যালয়ের সামনে ঘুরতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গুলশান-২ গোলচত্বরসহ আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। সারা দিনই নানা গুঞ্জন ছিল, বেগম জিয়া কার্যালয় থেকে বের হবেন। কিন্তু গুলশান কার্যালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানায়, অবরোধ চলাকালে ২০-দলীয় জোটপ্রধান এখান থেকে বের হবেন না। যাবেন না নিজের বাসায়ও। তার সঙ্গে ১৫ দিন ধরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ কয়েকজন মহিলা নেত্রী, উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুব আল আমীন ডিউ, নিরাপত্তা সমন্বয়কারী আবদুল মজিদ, মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার অবস্থান করছেন।দিনভর গুলশান কার্যালয়ের চিত্র : খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় ছাড়ছেন- এমন গুঞ্জন ছিল গতকাল দিনভর। আবার গ্রেফতার আশঙ্কাও ছিল বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান কার্যালয়ের সামনে কয়েকজন নিয়মিত পুলিশ অবস্থান করছেন। জলকামান ও পুলিশের প্রিজন ভ্যান নেই। পোশাকধারী অতিরিক্ত পুলিশও ছিল না। তবে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশকিছু সদস্যকে দেখা যায়। সারা দিনই তাদের উপস্থিতি ছিল। কার্যালয়ের মূল ফটকের তালাও ছিল খোলা। ৮৬ নম্বর সড়ক দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল করছে। বাইরে অবস্থান নিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যরা। সিএসএফের একটি গাড়ি মূল ফটকের সামনে আড়াআড়িভাবে রাখা ছিল। ফটকের ভিতরও বেগম জিয়ার ব্যবহৃত একটি গাড়ি আড়াআড়িভাবে রাখা হয়। পুলিশি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর রবিবার শেষ রাত থেকেই সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সেই সঙ্গে ছিল উৎসুক সাধারণ মানুষের আনাগোনা। তবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। দুপুরে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতিমা।স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক : বিকালে গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠান বিএনপি চেয়ারপারসন। বিকাল ৫টার দিকে স্থায়ী কমিটির নয় সদস্য ড. আর এ গণি, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, বেগম সারোয়ারী রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও নজরুল ইসলাম খান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে চলমান আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর বিএনপি-প্রধানের কী করা উচিত- তা নিয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান থাকলেও বিএনপি নেতাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়নি।




Discussion about this post