বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাঝে মাঝেই ‘আদালত অবমাননা’ প্রসঙ্গটি অনেক বেশি আলোচনায় উঠে আসে। অনেক সময় আদালতের কোন একটি আদেশ সম্পর্কে নানাভাবে ও নানা আঙ্গিকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সংবাদ কর্মী, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ও বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজন নানা ধরনের মন্তব্য ও প্রতিবেদন করে থাকেন। তাদের এ ধরনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আবার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ পাল্টা মন্তব্যও করেন অনেকে। এসব কিছুর প্রেক্ষিতে আবার কিছু লোকজন বলেন যে ‘এ ধরনের প্রতিবেদন বা মন্তব্য আদালত অবমাননার শামিল’, আবার ইতিপূর্বে দেখা গিয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে অনেক সময় আদালত অবমাননার অভিযোগও দায়ের হয়েছে এবং বিচারও হয়েছে।
আসলে, আদালত অবমাননা কী? প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ ব্রেইন ডিকসন বলেন, আদালত অথবা আদালতের ‘বিচারিক কার্য বা ‘বিচারিক কার্যধারাকে অবমাননা করা এবং আদালতের কর্তৃত্বকে হেয় করে যে কোনো লেখা বা কাজই আদালত অবমাননা। আদালত অবমাননা আইন অনুযায়ী আদালত অবমাননা বলতে দুই ধরনের আদালত অবমাননার কথা বুঝানো হয়েছে, দেওয়ানী অবমাননা ও ফৌজদারী অবমাননা। দেওয়ানী অবমাননা বলতে বুঝায়, ইচ্ছাকৃতভাবে কোন আদালতের রায়, ডিক্রী, নির্দেশনা, আদেশ, রীট, বা কার্যক্রম অবমাননা অথবা আদালতের নিকট প্রদত্ত কোন অঙ্গীকারনামা ভঙ্গ করা। আর ফৌজদারী অবমাননা অর্থ মৌখিক বা লিখিত কোন শব্দ বা চিহ্ন দ্বারা, বা প্রদর্শনযোগ্য কোন কিছুর মাধ্যমে এমন কোন কিছু প্রকাশ করা অথবা এমন কোন কাজ করা যার মাধ্যমে-
- কোন আদালতের কর্তৃত্বকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় বা অপপ্রচার করা হয় কিংবা হেয় প্রতিপন্ন বা অপপ্রচার করার অভিপ্রায় থাকে বা
- কোন বিচারিক কার্যধারা ক্ষুন্ন করা হয় বা হস্তক্ষেপ করা হয় বা স্বাভাবিক গতিধারাকে বাধাগ্রস্ত করা হয় কিংবা বিচারিক কার্যধারা ক্ষুন্ন বা হস্তক্ষেপ বা গতিধারাকে বাধাগ্রস্ত করার অভিপ্রায় থাকে;
বিচারিক কার্যধারা বলতে আদালতে রুজুকৃত এমন কোন আইনগত কার্যক্রম যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বা যার বিরুদ্ধে কোন আইনের অধীন দায়েরকৃত আপীল, রিভিশন বা রিভিউ চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয় নাই বা যার বিরুদ্ধে উক্তরূপ কার্যাধারা গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রন্ত হয় নাই, এবং এমনকি জারী কার্যক্রমও অনুরূপ কার্যধারার অংশ বলে গণ্য হবে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও বিশেষ করে গণ মাধ্যম খুবই তৎপর হওয়ায় সবকিছুই খুবই দ্রুত সামাজিক প্রেক্ষাপটে চলে আসে বিধায় অনেক মুহূর্তের মধ্যে অনেক আলোচনা-সমালোচনার পটভুমি তৈরি হয়ে যায়। তাই বিচারিক কোন বিষয়ে মন্তব্য কিংবা প্রচারের ক্ষেত্রে আদালত অবমাননা আইন অনুসরণ করে করতে হবে অন্যথায় সূশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রুজু হতে পারে আদালত অবমাননার অভিযোগ। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন-
১. যদি তিনি মৌখিক বা লিখিত কোন শব্দ বা চিত্র দ্বারা বা প্রদর্শনযোগ্য কোন কিছুর মাধ্যমে, বা অন্য কোনভাবে এমন কোন কিছু প্রকাশ করেছেন যা প্রকাশের সময় আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানী বা ফৌজদারী বিচার প্রক্রিয়ার হস্তক্ষেপ বা বাধা প্রদান করে কিংবা হস্তক্ষেপ বা বাধা প্রদানের সম্ভবনা থাকে;
২. যদি তিনি আদালতের কোন বিচারিক কার্যধারা বা উহার কোন অংশ বিশেষের বা শুনানী অন্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে এইরূপ কোন মামলার গুণাগুণ সম্পর্কে বা আদালতের খাস কামরায় বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত বিচারিক কার্যধারা সম্পর্কে পক্ষপাতমূলক মন্তব্য করেন বা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ না করেন;
৩. যদি তিনি এমন কোন তথ্য প্রকাশ করেন যা আদালত কর্তৃক জনস্বার্থে বা জন-শৃঙ্খলা বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা কোন গোপনীয় বিষয় সংক্রান্ত বা কোন আবিস্কার বা উদ্ভাবন সংক্রান্ত হবার কারণে, কোন তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে;
৪. যদি তিনি এমন কোন বিষয় প্রচার করেন যা বলবৎ অন্য কোন আইনের বিধান দ্বারা প্রকাশে বিধি নিষেধ রয়েছে লঙ্ঘন করিয়া বিতরণ করিবার ক্ষেত্রে এই উপ-ধারার বিধান প্রযোজ্য হইবে না;
আদালত অবমাননার জন্য কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে তিনি অনুর্ধ্ব ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক দুই হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে হইবেন: তবে আদালত অবমাননা সম্পর্কিত চলমান কার্যধারা যে কোন পর্যায়ে অভিযুক্ত আদালত অবমাননাকারী আদালতের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, উক্ত অভিযুক্ত আদালত অবমাননাকারী নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, তাহলে আদালত উক্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ হতে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন।
লেখকঃ এবিএম শাহজাহান আকন্দ (মাসুম), আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সম্পাদক, বিডি‘ল’নিউজ.কম
Discussion about this post