শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন (অনিরীক্ষিত) পাওয়া গেছে ২৯টির। এরমধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক বাদে সবক’টি ব্যাংক মুনাফায় রয়েছে। পাওয়া যায়নি ইসলামী ব্যাংকের তথ্য।

মুনাফায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কর পরবর্তী নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০টি ব্যাংকের। ৮টি ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে।

মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হওয়ার পরও শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে এমন তালিকায় রয়েছে ৪টি ব্যাংক। এরমধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে মুনাফা করেছে ৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) এ ব্যাংকটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৬০ পয়সায়।

বাকি তিনটি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৩০ পয়সায়। এ ব্যাংকটি প্রথম নয় মাসে মুনাফা করেছে ১৫৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

এনসিসি ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে মুনাফা করেছে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যা আগের বছর ছিল ৫৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ব্যাংকটির শেয়ার দাম নেমে এসেছে ৮ টাকা ৯০ পয়সায়।

আর প্রিমিয়ার ব্যাংক গত নয় মাসে মুনাফা করেছে ২৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে চলতি বছরের শেষ তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সোমবার এ ব্যাংকটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়।

অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা বাকি ৪টি ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক চলতি বছরের নয় মাসে মুনাফা করেছে ৪৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের বছর প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ১১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চলতি বছরে মুনাফা করেছে ৫৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

আর আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে। তবে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে। আগের বছর ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৩৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক চলতি বছর মুনাফা করেছে ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফা হয় ৯৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সোমবার এ ব্যাংকটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলো বেশি মুনাফা করে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। ব্যাংকের সার্বিক চিত্রও ভালো না। যার নেতিবাচক প্রভাবও দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে। তবে যে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে সেগুলো হয়তো পৃথকভাবে ভালো করেছে।

তিনি বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোন ব্যাংকে কি হচ্ছে তার খবর রাখেন না। সে কারণেই হয়তো মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হওয়ার পরও শেয়ার মূল্য অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত পৃথকভাবে কোম্পানির আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করা।

তথ্য পর্যালোচনা দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে নিট মুনাফায় শীর্ষ রয়েছে ইউসিবিএল। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে ২৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের বছরে প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২৩৭ কোটি এক লাখ টাকা। সোমবার লেনদেন শেষে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৮০ পয়সায়।

২৪৪ কোটি টাকা মুনাফা করা প্রাইম ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১৮ টাকা ৬০ পয়সা। ২৩৪ কোটি টাকা মুনাফা করা সাউথইস্ট ব্যাংকের দাম ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। ২৩০ কোটি টাকা মুনাফা করা সিটি ব্যাংকের দাম ২০ টাকা। ২০৬ কোটি টাকা মুনাফ করা ইবিএল’র দাম ২৭ টাকা ৫০ পয়সা।

এছাড়া ২০ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে আল-আরাফাহ ১৩৩ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ১৫৭ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ৯১ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ১৪৪ কোটি, শাহজালাল ব্যাংক ৮৩ কোটি, যমুনা ব্যাংক ৬৯ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ১৩৪ কোটি ও এসআইবিএল ৪৭ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।

বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক ৯৫ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক ১০৫ কোটি, পূবালী ব্যাংক ২০৪ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৪২ কোটি ও উত্তরা ব্যাংক ১১৬ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। এ ব্যাংকগুলোর শেয়ার ২৫ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে।