ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫ সদস্যের বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রাজীব হত্যার পর আরও অন্তত ছয়জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, প্রকাশক একই কায়দায় খুন হলেও তাদের মধ্যে কেবল বাবু হত্যা মামলাই তদন্ত শেষে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে গেল।
বুধবার (২০ জুলাই) মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান।
আসামিরা হলেন— জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম আরিফ, সাইফুল ইসলাম, মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম ওরফে আকরাম ওরফে হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহ।
আদালতে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আসামিদের মধ্যে সাইফুল ও তাহের পলাতক। শুনানিকালে অপর আকটকৃত ৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তারা অভিযোগ অস্বীকার করায় আগামী ৪ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন বিচারক।
মামলাটিতে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবির পরিদর্শক মশিউর রহমান। চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হয়ে আসার পর প্রথম ধার্য তারিখেই চার্জ গঠন করল আদালত।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, ব্লগ ও ফেসবুকে কথিত ইসলামবিরোধী লেখালেখির কারণেই ওয়াশিকুর বাবুকে খুন করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৩ মার্চ যাত্রাবাড়ীর নয়ানগরের একটি বাসায় বৈঠক করে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। বৈঠকে কথিত ‘বড় ভাই’ আব্দুল্লাহ ওরফে হাসিব, শরীফ, তাহের ওরফে জুনায়েদ, আবরার, জিকরুল্লাহ, আরিফুল ও সাইফুল উপস্থিত ছিল। পরিকল্পনায় ওয়াশিকুরকে চাপাতি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যার নির্দেশনা দেয় হাসিব।
বৈঠকে আটজন অংশ নিলেও হত্যা করতে যায় চারজন। দুজন চাপাতি নিয়ে ওঁৎ পাতে বাসার কাছে। কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নেয় একজন, নির্দেশনা অনুযায়ী দূরে থাকে আরেকজন। ওঁৎ পেতে থাকা দুই মাদরাসাছাত্র জিকুরুল্লাহ ও আরিফুল কুপিয়ে হত্যা করে বাবুকে। আর দ্রুত সটকে পড়ে জুনায়েদ ওরফে তাহের নামের আরেকজন। সাইফুল নামের আরেক যুবক চাপাতি নিয়ে নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে।
আসামিদের মধ্যে জিকুরুল্লাহ ও আরিফুল হত্যাকাণ্ডের পরই জনতার হাতে আটক হয়। জিকুরুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার তাফসির বিভাগের ছাত্র। আরিফুল মিরপুর-১ নম্বরের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র, বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বারকাউলিয়ায়। সাইফুল যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসার ছাত্র।
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ির দীপিকা মোড়ে ওয়াশিকুরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পালানোর সময় হিজড়া ও এলাকাবাসী মিলে দুজনকে আটক করে। এ ঘটনায় ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় হত্যা মামলা করেন।
ওয়াশিকুর মতিঝিলের ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাবা টিপু সুলতানের সঙ্গে তিনি বেগুনবাড়ির ৪/-এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপেজলার উত্তর হাজীপুরে।




Discussion about this post