বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে গত সোমবার গভীর রাতে লুঙ্গি পরে নৌপুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ডাকাত ভেবে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চাঁদপুরে এমভি পারাবত-১০ লঞ্চে এই তল্লাশি চালানো হয়।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মাঝরাতে যাত্রীবাহী নৌযানে তল্লাশির বিধান নেই বলে জানিয়েছেন বরিশালের নৌপুলিশ কর্মকর্তারা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মাঝরাতে যাত্রীবোঝাই লঞ্চ থামিয়ে তল্লাশি না করার অনুরোধ জানিয়েছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। সোমবার গভীর রাতে চাঁদপুর অতিক্রম করার সময় মাঝনদীতে লঞ্চ থামিয়ে নৌপুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন লোক লঞ্চে ওঠেন।
এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। সোমবার গভীর রাতে চাঁদপুর অতিক্রম করার সময় নৌপুলিশ পরিচয়ধারী একদল লোক লঞ্চটি নোঙর করার নির্দেশ দেন। এ সময় যাত্রীরা লঞ্চের মাস্টারকে অবরুদ্ধ করে মারধর করে। তারা লঞ্চ না থামানোর দাবি তোলে। এই পরিস্থিতিতে মাস্টার লঞ্চটি বরিশালের দিকে চালানো অব্যাহত রাখেন। কিন্তু একপর্যায়ে ট্রলারে করে লঞ্চটিকে ধাওয়া দেওয়া হয়। পরে মাঝনদীতে লঞ্চ থামিয়ে নৌপুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন লোক লঞ্চে ওঠেন। তাঁরা যাত্রীদের লাগেজ, ব্যাগ তল্লাশি করতে থাকেন। নৌপুলিশ পরিচয় দিলেও তাঁদের পরনে লুঙ্গি ছিল। তা ছাড়া তাঁদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এ কারণে ডাকাত ভেবে যাত্রীরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। যাত্রীরা চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নৌপুলিশ পরিচয় দেওয়া লোকজন লঞ্চ থেকে নেমে যান।’
বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের এক মাস্টার বলেন, মধ্যরাতে মাঝনদীতে যাত্রীবোঝাই লঞ্চ থামিয়ে অনেক সময় জ্বালানি তেল চায় চাঁদপুর নৌপুলিশ। দুদিন আগে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি পুবালি লঞ্চেও একই কায়দায় তল্লাশি চালানো হয়।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মধ্যরাতে মাঝনদীতে যাত্রীবাহী নৌযান থামিয়ে তল্লাশি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন বরিশাল-ঢাকা রুটের অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চ কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. নিজাম উদ্দিন।
বরিশাল নৌপুলিশের অতিরিক্ত সুপার আবদুল মোতালেব বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌপথের লঞ্চগুলো পন্টুনে থাকাকালে অনেক সময় পুলিশ ব্যাগ ও সন্দেহভাজন যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে মাঝনদীতেও লঞ্চ থামিয়ে তল্লাশি করা যায়। গত সোমবার মধ্যরাতে লঞ্চে তল্লাশির বিষয়টি চাঁদপুর নৌপুলিশের আওতাধীন।
চাঁদপুর নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকুল হাশিম বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, বরিশালগামী লঞ্চটিতে অবৈধ মাদকদ্রব্য আছে। এ কারণে অভিযান চালানো হয়। তবে পুলিশের সদস্যদের পরনে লুঙ্গি থাকার তথ্যটি সঠিক নয়। মূলত যারা অবৈধ কাজ করে, তারাই যাত্রীদের নিয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করতে থাকে। মাঝরাতে তেল চাওয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন।’
-প্রথম আলো
Discussion about this post