মাতৃত্বকালীন ছুটি
(১) মাতৃত্বকালীন ছুটি কি?
(২) মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন ২০১৭
(৩) মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়কাল কতদিন?
(৪) আপনি কীভাবে মাতৃত্ব-কালীন ছুটির জন্য আবেদন করবেন?
(৫) আপনি কখন থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া শুরু করতে পারেন?
(৬)আপনি ২৬ সপ্তাহ পরে আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ছুটি-কি বাড়াতে পারেন?
(৭) মাতৃত্ব-কালীন ছুটি নেওয়ার সময় আপনাকে কি কোনরকম ট্যাক্স দেওয়ার প্রয়োজন আছে ?
(৮) বৈতনিক ও অবৈতনিক উভয় প্রকার ছুটিরই কি মত দেওয়া হয়?
(৯) যদি আপনার মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাহলে আপনার কি হতে পারে?
(১০) গর্ভাবস্থায় ছুটি নেওয়ার সময় আপনি কি কি সুবিধা গুলি পেতে পারেন?
(১১) মাতৃত্বকালীন ছুটির দিন শেষ হয়ে যাবার পরে যদি আপনি কাজে ফিরে না যান তবে আপনার কি হতে পারে?
(১২) আপনি গর্ভবতী হওয়ার কারণে আপনার বস আপনার উপর রেগে যেতে পারেন কি ?
(১৩) গর্ভবতী মহিলার অধিকারের অন্যান্য সুবিধাগুলি কি কি?
(১৪) আপনার প্রসূতি বীমার প্রয়োজন আছে কি থাকলে কীভাবে আপনি এটি পেতে পারেন?
(১৫) একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য বা একটি পালিত শিশু গ্রহণের জন্য আপনি কি মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতে পারেন?
(১৬) সন্তান জন্মের সময় মা ছুটি পেলে বাবা পাবেন না কেন?
(১৭) মাতৃত্বকালীন সময়ে বিরতিঃ-
(১৮) আইনটির সংশোধনীতে কি কি সুবিধা দেওয়া হয়েছেঃ-
বাংলাদেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি আইনের পরিবর্তনগুলির সাথে আরও অনেক নতুন তথ্য রয়েছে।আপনার গর্ভাবস্থায় সন্তান ধারণের সময় আপনি যে ছুটি গুলি পেতে পারেন সে বিষয় সংক্রান্ত আরও অন্যান্য বিষয়সমূহ সংযুক্ত করা হয়েছে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি কি?
মাতৃত্বকালীন ছুটি হচ্ছে এমন এক ধরণের ছুটি যা গর্ভবতী মহিলাদের সদ্যজাত সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য শৈশবের প্রাথমিক পর্যায়ে নিদিষ্ট সময়ের জন্য যে ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে তাকে মাতৃত্বকালীন ছুটি বলে ।এটি গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক সপ্তাহ থেকেই প্রযোজ্য হয়- যা জন্ম পূর্ববর্তীকালিন ছুটি নামেও পরিচিত।
মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন ২০১৭
বাংলাদেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি আইনের পরিবর্তনগুলির সাথে আরো অনেক নতুন তথ্য ধরা পড়েছে ।আপনার গর্ভাবস্থায় সন্তান ধারণের সময় আপনি যে সময়টুকু ছুটি পেতে পারেন সে বিষয় সংক্রান্ত আরও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যোগ করা হয়েছে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি সময়কাল কতদিন?
মাতৃত্বের বেনিফিট অ্যাক্ট আইন ২০১৬ এর সংস্কারানুযায়ী মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় কাল ১২ সপ্তাহের পরিবর্তে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে এবং জন্ম পূর্ববর্তী প্রসব কালীন মাতৃত্বের ছুটির সময়সীমা ১২ সপ্তাহ করা হয়েছে।
মনে রাখবেন দুই বা তার অধিক সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় কম থাকে-এক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় ১২ সপ্তাহ এবং জন্ম পূর্ববর্তী প্রসবকালীন ছুটির সময় ৬ সপ্তাহ।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাতৃত্বের বেনিফিট আইনের যোগ্য হতে হলে একজন মহিলাকে গত ১২ মাসের মধ্যে অন্তত কমপক্ষে ৮০ দিন ঐ সংস্থায় কর্মরত অবস্থায় থাকতে হবে।দুর্ভাগ্যজনক গর্ভপাতের পরিস্থিতিতে কর্মচারীকে ঘটনার তারিখ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটিতে থাকতে দেওয়া হয়।
আপনি কিভাবে মাতৃত্ব-কালীন ছুটির জন্য আবেদন করবেন?
পারিবারিক কারণে ছুটি এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন অধিকাংশ সংস্থাগুলো তাদের নিজেদের আলাদা পদ্ধতির মাধ্যমে দিয়ে থাকেন ।মাতৃত্বকালীন ছুটি সাধারণত প্রসবের তারিখের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রদান করা হয়, মাতৃত্বকালীন ছুটির আইনে এই ব্যাপারে ৮ সপ্তাহের জন্য ছুটির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
আপনি কখন থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া শুরু করতে পারবেন?
গর্ভবতী কর্মচারী মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া শুরু করতে পারেন প্রসবের তারিখের ৮ সপ্তাহ আগে থেকে।

আপনি ২৬ সপ্তাহ পরে আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ছুটি-কি বাড়াতে পারেন?
যদি শারীরিক কারণে অতিরিক্ত ছুটির প্রয়োজন হয়, তবে কর্মচারী তার প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র প্রদান করতে পারেন , এক্ষেত্রে চিকিৎসকের থেকে একটি সার্টিফিকেট অথবা তার সমতুল্য কোনো প্রমাণপত্র প্রস্তুত করতে হবে।আপনার কর্মক্ষেত্র আপনার কারণগুলিকে ভালো করে সণাক্ত করে আপনার ছুটিকে বাড়িয়ে দিতে পারেন।তবে মাতৃত্বকালীন ছুটির আইনে শুধুমাত্র ২৬ সপ্তাহের জন্যই পূর্ণ বেতন পবেন।
মাতৃত্ব-কালীন ছুটি নেওয়ার সময় আপনাকে কি কোনোরকম ট্যাক্স দেওয়ার প্রয়োজন আছে ?
মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় একজন কর্মচারী যে বেতন পায় সেটি তার আয় করের জন্য বিবেচিত হবে, তিনি ট্যাক্স বন্ধনীর নিয়মের যে অবস্থানের অধীনে অবস্থান করেন তার উপরে নির্ভর করবে ।
বৈতনিক ও অবৈতনিক উভয় প্রকার ছুটিরই কি মত দেওয়া হয়?
মাতৃত্বকালীন ছুটির বর্ধিতবস্থাটি সাধারণত মা / অথবা সন্তানকে মুখোমুখি হতে হয় এমন পরিস্থির উপর নির্ভর করে।আইনানুযায়ী ২৬ সপ্তাহ বৈতনিক ছুটি হিসাবে ধার্য করা হয়।২৬ সপ্তাহের পরবর্তী যেকোন ছুটিই( যদি কর্মচারী নিয়ে থাকেন ) সাধারণত অবৈতনিক ছুটি হিসাবে ধার্য করা হয়।
যদি আপনার মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাহলে আপনার কি হতে পারে?
যদি আপনার মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় কি হতে পারে?মাতৃত্বকালীন ছুটির আইনের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী এটিও বিধান দেওয়া হয় যে,কিছু ক্ষেত্রে কর্মচারী তার বাড়ি থেকেও কাজটি করতে পারেন ,কিন্তু এটা নির্ভর করে কাজের প্রকৃতির উপর।
গর্ভাবস্থায় ছুটি নেওয়ার সময় আপনি কি কি সুবিধা গুলি পেতে পারেন?
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকার সময়ও, কর্মচারীদের বেতন প্রাপ্য। মাতৃত্বকালীন ক্ষতিপূরণ গণনা করা হয় তার ছুটির শুরু হওয়ার পূর্বেই তিন মাসের মেয়াদে তার গড় দৈনিক আয়ের হিসাব করে।

মাতৃত্বকালীন ছুটির দিন শেষ হয়ে যাবার পরে যদি আপনি কাজে ফিরে না যান তবে আপনার কি হতে পারে?
আপনি যদি আপনার নিয়োগকর্তার কাছে জমা দেওয়া নথির ন্যায্যতা ছাড়াই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পুনরায় কাজে হাজির না হন,আপনার সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার থাকবে না,যেহেতু আইনে কেবলমাত্র 26 সপ্তাহ ব্যাপী সময়কালীনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ারই উল্লেখ রয়েছে।
আপনি গর্ভবতী হওয়ার কারণে আপনার অফিসের বস আপনার উপর রেগে যেতে পারেন কি ?
উত্তর হল ‘না’।গর্ভধারণ কারুর রাগের কারণ হয়ে উঠতে পারে না।মহিলা কর্মীদের প্রতি আইন এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রতি মনোভবের অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং কর্মরত মহিলাদের সর্বদা বিচক্ষণতার সাথে বুঝে নিতে হবে তাদের অধিকার তাদের কর্মক্ষেত্রে তাদের গর্ভাবস্থার সময়ে।মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইনের অধীনে,কোনও কর্মচারীকে তার গর্ভাবস্থার কারণে তার চুক্তি বন্ধ করে দেওয়া বা তাকে চাকরীচ্যুত করা বেআইনি হিসেবে বিবেচিত।
গর্ভবতী মহিলার অধিকারের অন্যান্য সুবিধাগুলি কি কি?
মাতৃত্ব সুবিধা আইনে এটিও উল্লেখ করা হয় যে,মহিলাদের গর্ভাবস্থার ১০ সপ্তাহ থেকে প্রসবের তারিখ পর্যন্ত তাদের কোনরকম ভারী কাজ করতে না দেওয়ার কথা যা মা এবং সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের উপরেই প্রভাব ফেলে।
যদি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীটি একই সংস্থায় ৫০ জনেরও বেশী কর্মচারীর সাথে কাজ করেন তবে সেক্ষেত্রে তার অধিকার আছে শিশুরক্ষা সংক্রান্ত সুবিধা-গুলি গ্রহণ করার যখন তিনি পুনরায় কাজে ফিরে যোগ দেবেন।
আপনার প্রসূতি বীমার প্রয়োজন আছে কি থাকলে কীভাবে আপনি এটি পেতে পারেন?
সন্তানের জন্মদান একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার হয়ে ওঠে যদি আপনি একটি প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাকে নির্বাচন করেন।মাতৃত্বকালীন কভারেজের সাথে সংযুক্ত করা হয় সাধারণভাবে হাসপাতালে ভর্তির খরচ, প্রসবের সময় প্রাক এবং জন্মোত্তর খরচ, এবং নবজাতকের প্রথম ৩০ দিনের জন্য কভারেজও এর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। সর্বাধিক নীতি নিয়োগ-গুলি অনুযায়ী আপনার প্রসূতি বীমা দাবী করার আগে ২-৪ বছর অপেক্ষার সময়সীমা ধার্য করা হয়,আবার কিছু নিয়োগ-নীতি অনুসারে এই অপেক্ষার সময়কাল ৬ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।গর্ভাবস্থাকে স্বাভাবিকভাবে পরিকল্পিত এবং নিয়ন্ত্রিত করার লক্ষ্যে ক্ষতিপূরণ হিসাবে উচ্চ প্রিয়ামগুলি ধার্য করা হয় সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায় যদি এর পরিবর্তে।বেশীরভাগ বীমা প্রদানকারী যারা মাতৃত্বের পরিকল্পনাগুলি সরোবরাহ করেন তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নিয়মিত চ্যানেলের মাধ্যমে যেমন অনলাইনে সংযোগরক্ষাকারী হিসেবে এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে।
একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য বা একটি পালিত শিশু গ্রহণের জন্য আপনি কি মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতে পারেন?
নবজাতককে (৩ মাসের কম বয়সী শিশুকে) দত্তক নেওয়ার সময়েও মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা পাওয়া যায় তবে তার সময় সীমা হয় শিশুকে দত্তক নেওয়ার দিন থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত।তবে একটু বড় বাচ্চাদের দত্তক নেওয়ার সময় এই ছুটির কোনও বিধান নেই।
সন্তান জন্মের সময় মা ছুটি পেলে বাবা পাবেন না কেন?
ভারতে মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এই ছুটি সব প্রতিষ্ঠানেই প্রযোজ্য হবে৷তবে দাবি উঠেছে, শিশুসন্তানের দেখভালে মায়েদের সাহায্য করতে পিতাদেরও সবেতন ছুটি পাওয়া উচিত৷

মাতৃত্বকালীন ছুটি সময়ে বিরতিঃ-
মাতৃত্বকালীন সময়ে বিরতির জন্য, কর্মচারী যে সংস্থার জন্য কাজ করে সেখান থেকে তিনি পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারিনী।
সকল ভারতীয় কোম্পানীগুলিকে মাতৃত্বকালীন ছুটির নীতিগুলি মাতৃত্বকালীন ছুটি আইন (২০২৭ সংশোধিত) মেনে চলার জন্য খসড়া করা হয়েছে।
আইনটির সংশোধনীতে কি কি সুবিধা দেওয়া হয়েছেঃ-
এই আইনের সংশোধনীতে মহিলা কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে তাদের মাতৃত্বের অধিকার এবং সুবিধাগুলির সাথে তাদের শিক্ষার ব্যাপারটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় যেখানে নারীরা প্রায়ই অনৈতিক কাজের অভ্যাসের শিকার হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে অল্পবয়সী মায়েদের তাদের অধিকারগুলি সম্পর্কে ভালভাবে জানা অপরিহার্য যেহেতু তিনি তার সন্তানকে বড় করে তোলেন তার পেশাগত দায়বদ্ধতার সাথেই।আইনত বলতে গেলে, মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়কালের ক্ষেত্রে বিশ্বের বেশীরভাগ অংশগুলির তুলনায় ভারত অনুশীলনে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। যাইহোক,বিশেষকরে বেসরকারী এবং অসংগঠিত সংস্থা-গুলিতে এই নথিগুলির ক্ষেত্রে খুবই শোচনীয় অবস্থা।অতএব,সঠিক অভিমুখে মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার সম্পর্কে আপনার বা আপনার প্রিয়জনের জানা সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।
পরিশেষে বলা যায় যে এই আইনের সংশোধনীতে মহিলা কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে তাদের মাতৃত্বের অধিকার এবং সুবিধাগুলির সাথে তাদের শিক্ষার ব্যাপারটিকেও অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় নারীদের মাতৃত্বের অধিকার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নারীদের সুস্থতার ক্ষেত্রে সুযোগগুলা অনেক ফলোপ্রসু হয়েছে বলে সকলে মনে করছেন।
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
Discussion about this post