মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সাহায্য ছাড়াই, ভিনদেশি আইনজীবী ও বিচারকদের বাদ দিয়ে অল্প সময়ে কম খরচে সব আইনি প্রক্রিয়া ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার হচ্ছে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক আইনের শিক্ষক ও যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞরাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার কথা ভাবছেন।
বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে ‘যুদ্ধ যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন’ শীর্ষক প্রবন্ধে এ কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ৪৫তম বার্ষিক এই সেমিনারের আয়োজন করে ইতিহাস পরিষদ। সেমিনারে আরও নয়টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। সেমিনারের এবারের প্রতিপাদ্য: ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শতবার্ষিকী’।
সেমিনারে দ্বিতীয় অধিবেশনে শেখ হাফিজুর রহমান তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ইতিহাসে অনেক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ ১৫টিতে ১৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ‘গণহত্যা’ শব্দটি সেভাবে ব্যবহৃত হয়নি। ১৯৯৩ সালে যুগোস্লাভিয়া ও ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার যুদ্ধাপরাধের বিচারে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত হয়। ২০০২ সালের ১ জুলাই স্থায়ী বিশ্ব অপরাধ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৭৩ সালেই বাংলাদেশ এই অপরাধের বিচার শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই বিচারকাজ বন্ধ করে দেন। ২০১০ সালে আবার এই বিচার শুরু হয়। অনেকেই বলেছিলেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই বিচার। কিন্তু জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি আওয়ামী লীগেরও সাবেক কোনো কোনো নেতার বিচার শুরুর পর এই অপপ্রচার দুর্বল হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় অধিবেশনে আরও তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এমরান জাহান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এতে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আকমল হোসেন।
এর আগে প্রথম অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক এ এস এম আলী অশরাফ, ইসলামের ইতিহাসের তৌফিকুল হায়দার ও গোলাম কিবরিয়া ভুঁইয়া পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইএসএসের মহাপরিচালক কে এম আবদুর রহমান।
তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কলা অনুষদের ডিন আখতারুজ্জামান। এই অধিবেশনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ফাহমিদুল হক প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও প্রচারণার কৌশল সম্পর্কে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া বাংলা বিভাগের আবুল কাসেম ফজুলল হক ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের এ কে এম গোলাম রব্বানী আরও দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এর আগে সকাল ১০টায় সেমিনারের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ইতিহাসবিদদের প্রতি সঠিক ইতিহাস রচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধের শতবার্ষিকী পালন করতে চাই না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মকে মানবতাবোধে জাগ্রত হতে হবে।’ উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ।”প্রথম আলো
Discussion about this post