নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে থানার সামনে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা সেই কলেজছাত্রী মারা গেছেন। তার নাম লিজা আক্তার (১৮)। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধান পাড়ার আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে এবং রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন (১৮)। সাখাওয়াত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খান্দুরা এলাকার খোকন আলীর ছেলে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিঞা কলেজছাত্রী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, গেল ২৮ সেপ্টেম্বর থানা থেকে বেরিয়ে গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন লিজা আক্তার। ওইদিন রাতে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আগুনে তার শরীরের ৬৩ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল(রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে সময় লিজা জানান, স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
এদিকে ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে মানবাধিকার কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার নগরীর শাহ মখদুম থানায় যায় কমিটি। এ সময় কমিটির প্রধান ও মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবিরের সঙ্গে অপর তিন সদস্য ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান তদন্ত দলের প্রধান।
লিজার সহপাঠীরা জানান, লিজা প্রেম করে বিয়ে করেন। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। থাকেন রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে।
পরিবারকে না জানিয়েই সাখাওয়াত হোসেন লিজাদের গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে গত ২০ জানুয়ারি তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছু দিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও পরে কলহ দেখা দেয়। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় সাখাওয়াত লিজাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেননি। একপর্যায়ে সাখাওয়াত স্ত্রী লিজার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
পরে গত জুলাই মাসে লিজা সাখাওয়াতের খোঁজে ছুটে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। লিজা স্বামীর বাড়িতে গেলে সাখাওয়াত বাড়ি ছেলে পালিয়ে যান। এরপর লিজা নাচোল থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ সাখাওয়াত ও তার বাবাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে লিজাকে পাঠিয়ে দেন। এর পর তারা কয়েক দিন একসঙ্গে থাকেন। পরে সাখাওয়াত রাজশাহীতে ফিরে আবারও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
অভিযোগে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে লিজার সঙ্গে দেখা করেন সাখাওয়াতের এক ভগ্নীপতি। ওই সময় সাখাওয়াতও সঙ্গে ছিলেন। তারা উভয়েই লিজাকে মারধর করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই থেকে লিজা নগরীর শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ দেয়ার চেষ্টায় গত কয়েক দিন ধরে ঘুরছিলেন।
লিজার বন্ধুরা জানান, তিনি শনিবার দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আবারও শাহ মখদুম থানায় যান। সেখানে ডিউটি অফিসারকে অনেকবার অনুরাধ করেন তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য। ওসির সঙ্গে শেষে দেখা করেন; কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পাগল বলে পাত্তা না দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন।
থানা থেকে বের হয়েই কাছের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে থানার সামনে আসেন। সেখানে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে লিজার শরীর পুড়ে যায়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। পরে প্রায় অচেতন অবস্থায় লিজাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
রাজশাহী মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. অসীম কুমার জানান, আগুনে লিজার শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ কারণে তাকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, আগুনে লিজার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এর পর থেকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসাধীন ছিলেন লিজা।




Discussion about this post