চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ‘সন্তান জন্ম দেয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যিনি মা হয়েছেন একমাত্র তিনিই বোঝেন এর মর্মব্যথা। কিন্তু এর চেয়েও যে বেশি কষ্টের কোনো ব্যাপার থাকতে পারে তা জানা ছিল না। যাদের কারণে আমি মেয়েকে হারালাম, সেই অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিচার হয়তো আর হবে না’!
২০১৮ সালের ২৯ জুন রাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু রাইফা। এরপর ১৮ জুলাই ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেন রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান।
দু’দিন পর এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্র দেব ও ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খানকে আসামি করা হয়।
রাইফার মা রুমানা খান বলেন, আমার দুই বছর চার মাস বয়সী একমাত্র কন্যা রাফিদা খান রাইফা চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করলো। কোলের সন্তান হারানোর শোক যে কত কষ্টের তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। সন্তান হারানোর শোক সহ্য করার মতো নয়। এই অসহনীয় শোক আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে সারাটা জীবন।
‘যাদের কারণে আমি মেয়ে হারালাম, সেই অভিযুক্ত চিকিৎসকরা অনেক প্রভাবশালী। এ কষ্টের পাশাপাশি বিচার না পাওয়ারও মনোবেদনা পেয়ে বসেছে আমাকে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঠান্ডাজনিত গলাব্যথা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল শিশু রাইফা। তার এই সাধারণ রোগ প্রাণঘাতী ছিল না। তারপরও ওই হাসপাতালে ভর্তির মাত্র দু’দিনের মাথায় রাইফাকে না ফেরার দেশে চলে যেতে হলো। এটা যে চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা আর অবহেলার কারণে হয়েছে তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকজন চিকিৎসকও আমাদেরকে জানিয়েছেন, ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই রাইফা’র মৃত্যু হয়েছে। রফিসিন নামের যে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়েছিল তার শরীরে, সেটি ওভারডোজ দেয়ার কারণে রিঅ্যাকশন হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রাইফা।’
রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান বলেন, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি চিকিৎসকদের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অবহেলার দায়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করা হয়েছে। এরপরও চট্টগ্রামের বিএমএ নেতারা ও ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসকদেরকে বাঁচানোর জন্য নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতা ও টাকার জোরে সবকিছু নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপতৎপরতার কারণে এখন মনে হচ্ছে, হয়তো বিচারও পাবো না।’
চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু প্রতিরোধ এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের স্বার্থে রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশীট প্রদানের দাবি জানান রাইফার মা রুমানা খান। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী। তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
Discussion about this post