যে সকল বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢুকতে ভিসা লাগেনা
সরকার বাংলাদেশে বিদেশীপুঁজি ও প্রযুক্তি আকৃষ্টকরণ, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভ‚ত বিদেশী নাগরিকদের এদেশে আগমন ও অবস্থান সহজতর করার জন্য আগমনী ভিসা অর্থাৎ Visa On Arrival প্রদানের সুযোগ রেখেছে।
বিভিন্ন দেশ হতে আগতদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর সমূহের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষান্তে নির্দিষ্ট শ্রেণীর পাসপোর্টধারীদের শর্তসাপেক্ষে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে বহুভ্রমণ সুবিধা ব্যতীত সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) দিনের আগমনী ভিসা প্রদান করতে পারবে।
Visa On Arrival কি?
ভিসা অন এরাইভাল হল আপনি কোন দেশে পৌঁছে তাৎক্ষনিক ভিসা সুবিধা গ্রহন করে সেইদেশে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। অর্থাৎ আপনার পূর্বে থেকেই ভিসা গ্রহনের প্রয়োজন নেই।
আরো সহজ ভাষায়,ভিসা অন এরাইভাল হচ্ছে আপনাকে আগের থেকে ভিসা নিতে হবে না, ঐ দেশের Immigration এ পৌছলে আপনাকে ভিসা দিয়ে দিবে, তবে ভিসার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র থাকতে হবে এবং ভিসা দেবার দেশের উওর আপনার ভিসা পাবার সম্ভাবনা নির্ভর করে।
প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশীরা অন এরাইভাল ভিসা পাবার অধিকারী। আবার অন্য দিকে, অনেক বিদেশী নাগরিকদের ও বাংলাদেশে ঢুকতে ভিসা লাগে না, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করলে তাদেরকে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করে থাকেন।
অন এরাইভাল ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট সাপেক্ষে বিবেচনা করা হয়ঃ
ক. যে সকল দেশে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই, শুধুমাত্র সে সকল দেশ হতে আগত নাগরিকদের ভ্রমনের উপযুক্ততা যাচাই করে অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করা যেতে পারে।
যেমনঃআলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, চিলি, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, ইকুয়েডর, ফিজি, ঘানা ও আরোকিছু দেশ।
খ. বিদেশী বিনিয়োগকারী বাব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র এবং বিনিয়োগ বোর্ড বাবেপজার প্রত্যয়ন পত্রের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ভিত্তিতে অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করা যেতে পারে। তবে, আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী ব্যক্তির আগমনের বিষয়টি বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে।
গ. বাংলাদেশে কেবলমাত্র সরকারী কাজে, ব্যবসায়, বিনিয়োগ ও পর্যটনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়ান ফেডারেশন, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, মিশর, তুরস্ক, ব্রুনাই এবং ইউরোপের দেশসমূহ হতে উক্ত দেশ সমূহের পাসপোর্টধারী আগতদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর সমূহের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষান্তে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করতে পারবে।
ঘ. কোন ব্যক্তি তারনিজ দেশ ব্যতীত অন্য কোন দেশ, যেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস নেই, সে দেশ থেকে বাংলাদেশে আগমন করলে ভ্রমণের উপযুক্ততা যাচাই করে তাকে অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করা যেতে পারে।
ঙ. বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিদেশী নাগরিক, তাদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব সনদ বা প্রমাণ পত্রের ভিত্তিতে অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করা যেতে পারে।
চ. বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাস,জাতিসংঘ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ/আগমন সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি পরীক্ষান্তে অন এরাইভাল ভিসা প্রদান করা যেতে পারে।
উপরোক্ত শ্রেণীতে অন এরাইভাল ভিসা নিয়ে আগত বিদেশীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে বিদ্যমান ভিসা স্বীকৃতির আলোকে সংশ্লিষ্ট ভিসা শ্রেণীতে উল্লিখিত শর্তে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবে।
Connecting Flight পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট যাত্রী বহনকারী এয়ারলাইনস এর অনুরোধে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অথবা Next available flight সর্বোচ্চ ৭২ (বাহত্তর) ঘন্টার জন্য Transit visa দিতে পারবে। এ জন্য সার্ভিস চার্জ হিসেবে মাথাপিছু ২০(বিশ) মার্কিন ডলার বা সমপরিমান অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় নির্ধারিত ব্যাংকে ও নির্ধারিত হিসাবে জমা দিতে হবে।

আগমনী ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নো বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:
ক. বৈদেশিতমুদ্রায় (ডলার/পাউন্ড/ইউরো) ভিসা ফি প্রদান করতে হবে;
খ. সরকারী কাজ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে আগত বিদেশীর নিকট ন্যূনতম ৫০০(পাঁচশত) মার্কিন ডলার/সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা নগদ/ক্রেডিট কার্ডে থাকতে হবে;
গ. আগমনকারীর নিকট ফিরতি বিমান টিকেট থাকতে হবে;
ঘ. আগমনের সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকতে হবে।
ঙ. যে সব দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ফি প্রযোজ্য নয় সে সব দেশের পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে আগমনী ভিসার জন্য ফি প্রযোজ্য হবেনা;
চ. যে সকল দেশের সাথে পারস্পরিকতা ( reciprocity ) বা চুক্তির ভিত্তিতে আগমনী ভিসা প্রদান করা হয় সেসব দেশ ব্যতীত অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আগমনী ভিসা ফি প্রযোজ্য হবে; এবং
ছ. অন এরাইভাল ভিসায় আগত বিদেশীদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনএবং স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি মাসিক বিবরণী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বহিরাগমন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে প্রেরণ করবে।
আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আগমনী ভিসা প্রদান করতে হবে। তবে বিদেশী সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে বাংলাদেশে আগমনের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।অন এরাইভাল ভিসা প্রাপ্তদের পাসপোর্ট স্থল ও বিমান বন্দরে কর্তব্যরত ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যথা নিয়মে আগমন ও প্রস্থান সীল প্রদান করবে।
Discussion about this post