শাঁখারিবাজারে দোল পূর্ণিমায় হোলি উৎসবে কলেজশিক্ষার্থী রওনক হত্যার ঘটনায় খুনীদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ থেকে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে খুব অল্প সময় নেয় ঘাতকরা। তারা দ্রুতই রওনককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রওনকের দুই বান্ধবীসহ সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে রওনকের হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।
গত ১ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে শাঁখারিবাজার এলাকায় হোলি উৎসবে ভিড়ের মধ্যেই কলেজশিক্ষার্থী রওনককে (১৮) ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করার পর দুপুর সোয়া ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রওনক আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এ বছর তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কামরাঙ্গীরচরে রনি মার্কেট এলাকায় তার পরিবার থাকে। রওনকের বাবা নেই, মা হেনা বেগম স্থানীয় ওয়ার্ডের মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। ঘটনায় দিন রাতে তিনি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. বদরুল হাসান বলেন, ‘আবির উৎসবে শিক্ষার্থী রওনক হত্যার রহস্য অনেকাংশে উদঘাটন করা হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্তও করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরের এক মেয়ের সঙ্গে রওনকের বন্ধুত্ব ছিল। কয়েক মাস আগে ওই মেয়ের এক বান্ধবীর সঙ্গে রওনকের পরিচয় হয় ফেসবুকে, কিছুদিনের মধ্যে তা বন্ধুত্বে রূপ নেয়। একসময় সে রওনককে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। পারিবারিকভাবে বিষয়টি জানাজানি হলে রওনকের পরিবারের সঙ্গে ওই মেয়ের পরিবারের যোগাযোগ হয়। রওনকের পরিবার বিয়ের জন্য তিন বছর সময় চেয়ে নেয়। তারপরও প্রায়ই মেয়েটি রওনককে বিয়ে জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে মেয়েটির পরিবার তাকে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনা জানতে পেরে রওনকের আগের বান্ধবী তার সঙ্গে আবারও যোগাযোগ শুরু করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন রওনককে মোবাইলে ফোন করে তার আগের বান্ধবী শাঁখারিবাজারে হোলি উৎসবে ডেকে আনে। বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে আসার কিছুক্ষণ পরই রওনককে ধাওয়া করে পাশের গলিতে নিয়ে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে হত্যাকারীরা।
এদিকে, রওনক হত্যার ঘটনায় তার দুই বান্ধবীর জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন রওনকের মা হেনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ওই দুই মেয়েই রওনককে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। ওদের ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই খুনিদের নাম পাওয়া যাবে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী প্রায় দেড়শ। এ ছাড়া, এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে রওনকের দুই বান্ধবী ও ঘটনার সময় রওনকের সঙ্গে আসা বন্ধুরাও রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে শনাক্ত হওয়া খুনীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি, খুব শিগগিরিই আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’
বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post