গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের ‘রাজাকার কমান্ডার’ পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনালে রায় পড়া শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রায় পড়া শেষ হয়। ১২৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংক্ষিপ্ত আকারে পড়া হয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হাসান আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দ্বিতীয়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগে তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগের আদেশ দেওয়া হয়। প্রথম অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে মৃত্যুদণ্ড কীভাবে কার্যকর করা হবে, কিছু বলা নেই। তবে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা আছে। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা আছে। সরকার চাইলে এই দুটোর যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক হাসান আলীকে খুঁজে বের করে রায় কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ এপ্রিল এ মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করে, তারা হাসান আলীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। এ জন্য তারা সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের আরজি জানিয়েছে। তবে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিকে খালাসের আরজি জানিয়ে বলেন, অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।
গত বছর ১১ নভেম্বর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগে হাসান আলীর বিচার শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষে ২৬ জন সাক্ষ্য দেন। গত বছরের ৩ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পলাতক ঘোষণা করে হাসান আলীর বিচার করেন ট্রাইব্যুনাল।
ছয় অভিযোগ: হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, একাত্তরের ২৭ এপ্রিল তাড়াইলের সাচাইল পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আহমদ ওরফে হাচু ব্যাপারীর সাতটি ঘর লুট করে আগুনে পুড়িয়ে দেন হাসান আলী, সহযোগী রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। হাচু ব্যাপারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগ, ২৩ আগস্ট হাসান আলী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা কোনাভাওয়াল গ্রামের তফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘর লুট ও দুজনকে অপহরণ করেন। তৃতীয় অভিযোগ, ৯ সেপ্টেম্বর হাসান আলী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ার অক্রুর পালসহ ১০ জনকে হত্যা করে ঘরবাড়িতে আগুন দেন। চতুর্থ অভিযোগ, ২৭ সেপ্টেম্বর বড়গাঁও গ্রামের মরকান বিলে বেলংকা রোডে সতীশ ঘোষসহ আটজনকে হত্যা করেন হাসান আলী ও সহযোগী রাজাকাররা। পঞ্চম অভিযোগ, ৮ অক্টোবর হাসান আলী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবন ঠাকুরকে হত্যা করে ঘরবাড়ি লুট করেন। ষষ্ঠ অভিযোগ, ১১ ডিসেম্বর হাসান আলী ৩০-৪০ জন রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে সাচাইল গ্রামের শতাধিক ঘরে অগ্নিসংযোগ করেন এবং আবদুর রশিদকে হত্যা করেন।”প্রথম আলো




Discussion about this post