ডেস্ক রিপোর্ট
রাজারবাগ পীরের সিন্ডিকেটের সদস্যে নিয়ে দুদক, সিআইডি ও সিটিটিসিকে তদন্ত করতে বলা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের করা আবেদনের শুনানি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এই আবেদনের আপিল শুনানি সোমবার (২৫ অক্টোবর) দিন ঠিক করেছেন আদালত।
রোববার (২৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
এর আগে বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি না করে প্রধান বিচারপতি সরে যান।
আদালতে এদিন মফিজুল ইসলামের করা আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এদিন মামলাটির শুনানির পূর্বেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাকে এ মামলা থেকে বাদ দিয়ে রাখেন। বেঞ্চের অপর জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকা (কজলিস্ট) অনুসারে মামলাটি শুনানির শুরুতে এ ঘটনা ঘটে।এরপর এ মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে মামলাটির আদেশের জন্য আজ দিন নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতির সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, প্রধান বিচারপতি চাইলে যে কোনো মামলা থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন। মূলত মামলার বিষয়ে বাইরে থেকে কোনো রকম হস্তক্ষেপ কিংবা ব্যক্তিগত কারণে মামলা থেকে বিচারপতিদের সরে দাঁড়ানোর নজির এর আগেও অনেক রয়েছে।

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমান ও তার দরবারের সব সম্পদের হিসাব চেয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত না করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করেন আদালত। তারই ধারাবাহিতায় এদিন সেটি শুনানির জন্য আসে।
পীরের পক্ষে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বারজজ আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার দরবারের সব সম্পত্তির হিসাব চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই দরবারের পীরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে করা (রিটে উল্লেখিত ৮টি) মামলা তদন্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে মামলার বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে সিআইডি। সেই সঙ্গে আদালত রিট আবেদনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছেন।
এছাড়া সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়। রুলে পীর ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চান আদালত।
হাইকোর্ট তার রুলে এই রিটের ভুক্তভোগীদের হয়রানি, অপদস্থ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফৌজদারি মামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চান।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বিশেষ শাখা), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরাধ তদন্ত বিভাগ), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-মহাপরিদর্শক, গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার, দুদক চেয়ারম্যান, রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমান ও হয়রানিমূলক মামলার বাদীসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন। আদালতে ওই দিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ভুয়া মামলার সিন্ডিকেট খুঁজতে রাজারবাগ পীর ও তার মুরিদদের দেশব্যাপী দায়ের করা গায়েবি মামলার বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়।
পীরের মুরিদদের দায়ের করা মামলায় হয়রানির শিকার সাত বছরের শিশু, নারী, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাদরাসার শিক্ষক ও ব্যবসায়ীসহ আট ব্যক্তির পক্ষে এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্রসচিব ও আইজিপিসহ ২০ জনকে বিবাদী করা হয়।
Discussion about this post