বিডি ল নিউজঃ দেশের এখন সবচেয়ে টপ নিউজ হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ড। এখনো এর পিছনে কে বা কারা জড়িত তার কোন হদীস পাওয়া যায় নি। সাক্ষ্য আইন অনুসারে, রিলেটেড কিছু ফ্যাক্ট পাওয়া যাচ্ছে অবশ্য। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্ট হচ্ছে, শফিউল ইসলামের বাড়ি থেকে একই বিভাগের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকালে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, শফিউল ইসলামকে হত্যার আগের রাত থেকেই তাঁর বাসায় ওই ছাত্রী অবস্থান করছিলেন। ওই ছাত্রীর বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রধান পাড়া গ্রামে। তিনি তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী। নিহত ড. শফিউল ওই ছাত্রীকে তার নিজ বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখার পর ওই ছাত্রী নিজেকে উদ্ধার করার জন্য তার বাড়িতে ফোন করেন। ওই ছাত্রীর মা তার মেয়েকে উদ্ধার করার জন্য মেয়ের সহপাঠীদের ফোনে অনুরোধ করেন। এ সময় ঐ ছাত্রীও তার ঘনিষ্ঠজনদের ফোন করে তাকে আটকে রাখার বিষয়টি জানাতে থাকেন।
হত্যার পরপরই ডিবি পুলিশের সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। কিছুক্ষণ পর তারা ওই বাড়িতে তালা ভেঙে তল্লাশি চালায়। এসময় বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ওই ছাত্রীকে আটক করে পুলিশ। তবে তার আটকের ঘটনা গোপন রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার ক্লু উদ্ধারের চেষ্টা করছে তারা। এদিকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের মোবাইল ফোনটি আঁকড়ে ধরেছিলেন নিহত শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম। শরীর থেকে অধিক রক্তক্ষরণে যখন তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন তখনো বারবার চেয়েও মোবাইলটি হাতে নিতে পারেননি উপস্থিত শিক্ষকরা। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে রক্ত দেয়া হচ্ছিল তখনই হাত থেকে পড়ে মোবাইলটি। এর খানিক পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ড. শফিউল। পরে ওই মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুক। তিনি পরে লিখিত নিয়ে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেন। প্রশ্ন উঠেছে কেন মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ড. শফিউল হাতছাড়া করতে চাননি মোবাইলটি। তবে কি বড় কোনো প্রমাণ লুকিয়ে আছে মোবাইলটিতে? হয়তো তিনি হামলাকারীদের ফোন রেকর্ড করেছিলেন। কিংবা ভিডিও বা এসএমএস (খুদেবার্তা) কিংবা কল নাম্বার সংরক্ষণ করেছেন। এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষকসহ হত্যার ক্লু অনুসন্ধানে নামা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আব্দুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাক্ষী হিসেবে একটি মোবাইল ফোন পেয়েছি। সেটি নিয়ে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তিনটি বিষয় নিয়ে আমরা সামনে এগোচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে নগরীর মতিহার থানার কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর সংবাদকদের বলেন, ওই ছাত্রীকে আটকের পর গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে আপনাদের জানানো হবে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
তবে, এখন পর্যন্ত পুলিশের অব্যাহত অভিযানে মোট ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ন আহমেদ, ওই কলেজের শিক্ষক ফজলুল হক, চৌদ্দপাই এলাকার পল্লীচিকিৎসক মোশারফ হোসেন, আবদুল্লা আল মাহামুদ, মশিউর রহমান, হাসিবুর রহমান, জিন্নাত আলী, সাইফুদ্দিন, রেজাউল করিম, সাগর ও আরিফ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রিমান্ডের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।




Discussion about this post