নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারণার মামলার আসামি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ শাহেদের প্রতারণার বিষয়ে জানতে দুদিন আগে একটি হটলাইন খুলেছিল র্যাব। এতে এখন পর্যন্ত মোট ১২০টি ফোনকল ও ২০টি ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জমা হয়েছে শাহেদের বিরুদ্ধে। ‘মহাপ্রতারক’ বলে অভিযুক্ত এই আসামির বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া, রিজেন্টের কর্মচারীদের বেতন না দেয়া, সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিলেছে বেশি।
রবিবার (১৯ জুলাই) র্যাবের সদরদফতরে ফোর্সের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, শাহেদ করিমকে গ্রেপ্তারের পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সেখানে শাহেদ করিম তার সব অপরাধ অপরাধ স্বীকার করেন। পরে শাহেদ করিমের ড্রাইভার ও এমডির (রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজ) ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা গত ১৭ জুলাই র্যাবের একটি সেবা লাইন (হেল্পলাইন- 01777720211) চালু করি। সেবা লাইনের উদ্দেশ্য ছিল যারা রিজেন্ট হাসপাতাল বা শাহেদ করিমের হাতে প্রতারিত হয়েছেন, তাদের আইনি পরামর্শ ও আইনি সহায়তা দেয়া। এতে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। এছাড়া একটি অফিসিয়াল ই-মেইলে বিস্তারিত তথ্যের জন্য আহ্বান জানাই। আজ পর্যন্ত ১২০টি ফোনকল ও ২০টি ই-মেইল মারফত অভিযোগ পেয়েছি।
অভিযোগগুলোর মধ্যে চাকরি পাইয়ে দেয়া ও বিভিন্ন দফতরে বদলির সুপারিশের আশ্বাস দিয়ে বিশাল অংকের টাকা আত্মসাৎ, বিভিন্ন জায়গায় বালু ভরাট, রড-সিমেন্ট সাপ্লাইয়ের কথা বলে টাকা আত্মসাৎ, রিজেন্ট হাসপাতালে সেবার নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, রিকশা-ভ্যানের ভুয়া লাইসেন্স দেয়ার তথ্য মিলেছে সাহেদের বিরুদ্ধে। এছাড়া রিজেন্টের এমডি মাসুদ পারভেজ ও শাহেদের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক থেকে ফোন দিয়ে ঋণ নেয়া সংক্রান্ত অভিযোগ মিলেছে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, শাহেদ ও মাসুদের বিষয়ে বিদেশ থেকেও আমাদের কাছে ফোনকল আসে। বিদেশের অনেকেই এই দুজনের কাছে প্রতারিত হয়েছেন বলে ফোন করেছেন। যারা বিদেশ থেকে ফোন করেছেন তাদের অভিযোগ অর্থ সংক্রান্ত প্রতারণার। যেসব ফোনকল ও ই-মেইল পেয়েছি সবগুলোর মূল অংশ ছিল আর্থিক লেনদেন। আমাদের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, শাহেদ আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মতো প্রতারণা করেছেন। আগামী দু-তিন দিন এই হটলাইনে অভিযোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, শাহেদ ও রিজেন্ট সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার নেওয়ার জন্য র্যাব পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে র্যাব তদন্তভার নেবে। যেহেতু র্যাব শুরু থেকেই এ মামলা করছিল, এরই ধারাবাহিকতায় আমরা তদন্তের কাজ করার জন্য আবেদন করি।
শাহেদের প্রতারণার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ পরিচালক বলেন, সাহেদ সরকারি চাকরি দেয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে বদলি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ শাহেদ করিম করতেন। বদলির জন্য অনেকেই তাকে টাকা দিয়েছিল তাকে।
শাহেদের পৃষ্ঠপোষক কারা? র্যাব জানতে পেরেছে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহেদকে ১৫ জুলাই ভোর ৫টা ১০ মিনিটে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৯টা ৩০ মিনিটে আনা হয় র্যাব কার্যালয়ে। একই দিন তাকে আমরা তদন্ত সংস্থার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করি। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশি সময় পাইনি। শাহেদের পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা দেখবেন বলে আমি মনে করি।
অভিযোগ দাতাদের মধ্যে শাহেদের প্রতিষ্ঠানের কেউ আছেন কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, র্যাবের কাছে শাহেদের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা ফোন দিয়েছেন। শাহেদ তাদের বেতন দিতেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলার কারণে শাহেদ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে গিয়েছিলেন কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, যে কেউ যে কারও সঙ্গে ছবি তুলতে পারে। যাদের সঙ্গে শাহেদের ছবি তোলা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাদের সাথে সবাই ছবি তুলতে চায়। ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই এসব প্রতারণা করা যাবে, এগুলো বলা যাবে না।
Discussion about this post