নিজস্ব প্রতিবেদক: শিশুখাদ্যে ভেজাল রোধে আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ তদারকি সেল। এজন্য ইতোমধ্যে অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে প্রধান করে ৯ সদস্যের তদারকি সেলও গঠন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীতে এবং পরবর্তী সময়ে সারা দেশে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানকালে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
জানতে চাইলে অধিদফতরের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা খুব জরুরি। আর তাই পুষ্টিসমৃদ্ধ ও গুণগতমানসম্পন্ন খাবার দরকার। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্যের মান কতটুকু ভালো, তা বোঝা মুশকিল। তাই আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে শিশুখাদ্য ভেজাল রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করব।
এজন্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের তদারকি সেল গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, তিনি ছাড়া তদারকি সেলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আতিয়া সুলতানা, মাসুম আরিফিন, আফরোজা রহমান, মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল, ইন্দ্রানী রায়, তাহমিনা আক্তার, রজবি নাহার রজনী ও মাগফুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, এ সেলের সদস্যরা শিশুখাদ্যের বিভিন্ন দিক ক্ষতিয়ে দেখবে। এছাড়া সেলের সদস্যরা শিশুখাদ্য তৈরির কারখানাগুলোয়ও অভিযান পরিচালনা করবে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলেই ভোক্তা আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, রামপুরা বাজার, নয়াবাজার ও রাজধানীর একাধিক স্থানের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপার শপে গিয়ে একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুখাদ্য নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। রাজধানীর ধানমণ্ডি-১৫ মিনাবাজার সুপার শপে শিশুখাদ্য কিনতে আসা জুলিয়া আক্তার বলেন, ৯ মাসের বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি একটু একটু করে অন্য খাবারও দিই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কৌটার দুধও পান করাচ্ছি। তবে এসব ব্র্যান্ডের দুধ কতটা মানসম্পন্ন, তা জানি না। তাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এমন উদ্যোগে খুশি হয়েছি। কারণ তারা অভিযান পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীরা খারাপ মানের শিশুখাদ্য বিক্রি করবে না। আবার বিক্রি করলেও ধরা পড়বে। আর ভোক্তারা মানসম্পন্ন শিশুখাদ্য কিনে শিশুকে খাওয়াতে পারবে।
রাজধানীর রামপুরা বাজার সংলগ্ন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শিশুখাদ্য কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্ত মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, এক মাস আগে তিনি শান্তিনগরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানকার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে তার সাত মাসের শিশুর জন্য বিদেশি ব্র্যান্ডের কৌটার দুধ কিনেন। পরে বাসায় গিয়ে দেখেন, পণ্যের মেয়াদ আরও এক মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দোকানে নিয়ে গেলে তা পাল্টে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে পণ্য কেনার সময় মেয়াদের তারিখ লক্ষ করা হয় না। আর এসব মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য শিশুকে খাওয়ালে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। তাই ভোক্তা অধিদফতরের এমন অভিযান মনে হচ্ছে অনেক কার্যকর হবে। কারণ অনেক সময় পত্রিকা বা টেলিভিশনের দেখছি পণ্যের গায়ে মেয়াদ না থাকায় অসাধুদের শাস্তির আওতায় এনেছেন তারা। অধিদফতরের এমন কাজকে সাধুবাদ জানাই।
রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. হাকিম জানান, দুই বছরের ভাগিনার জন্য প্রায়সময় বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্য কেনেন। অনেক সময় তিনি বিদেশি চকলেটও কিনেন। সেখানে অনেক সময় আমদানিকারকের স্টিকার থাকে না। তাহলে কীভাবে বুঝব এটা আসল পণ্য কি না। বাংলাদেশের টাকার পরিমাণও লেখা থাকে না। অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, অনেক সময় বাজার তদারকি করতে গিয়ে দেখেছি, বিভিন্ন বিদেশি শিশুখাদ্যে আমদানিকারকের নাম নেই। নেই মূল্যের পরিমাণও। অনেক সময় দেখেছি, দেশীয় তৈরি শিশুখাদ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা নেই। সব মিলিয়ে এবার আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে শিশুখাদ্যের দিকে নজর দিয়েছি। যাতে শিশুর খাদ্যে কোনো ধরনের ভেজাল না থাকে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, শিশুখাদ্যে ভেজাল রোধ করার উদ্যোগ ভোক্তা অধিদফতরের একটি ভালো চিন্তা। তাই তাদের এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। তবে তাদের যথাযথভাবে এ কাজ করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, অন্যসব পণ্য বিক্রি ও তৈরির দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
Discussion about this post